ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৌলভীবাজারে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২০
মৌলভীবাজারে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি হাওড়ের প্রান্তরজুড়ে সোনালী আমন ধান। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, হাওড়জুড়ে সোনালী আমন ধানের হাসি। যেদিকে চোখ যায় শুধুই এখন পাকা সোনালী ধান।

আবহমান বাংলার গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এই সৌন্দর্য অনন্য।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে রোপা আমনের। তাই চোখে-মুখে সার্থকতার হাসি ফুটেছে কৃষকদের।

মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলাতে এবাব বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৪০ একর এবং অনাবাদী জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৯৫ হেক্টর।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, মৌলভীবাজারে গত বছরের তুলনায় চলতি রোপা আমনের বাম্পার ফলন হতে চলেছে। ২০১৯ সালে আমাদের আবাদ ছিল এক লাখ ১৫০ হেক্টর। চলতি বছর আমাদের আবাদ হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৪৮০ হেক্টর।

তিনি জানান, ধান থেকে চাল উৎপাদনে ২০১৯ সালে ফলন ছিল দুই দশমিক ৮৫ টন প্রতি হেক্টর। সে তুলনায় চালে উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৮৫ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন। চলতি বছর ধারণা করা হচ্ছে ফলন দুই দশমিক নয় টন প্রতি হেক্টরে গিয়ে দাঁড়াবে। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে চাল উৎপাদন হবে দুই লাখ ৯৪ হাজার ২৯২ টন। উৎপাদনের বিবেচনায় আট হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন বাড়তি উৎপাদন পাওয়া যাবে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।

এই সাফল্যের নেপথ্যের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবারই প্রথম হাওড় এলাকায় রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে যেটা আগে হয়নি। ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা ধান উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছেন। আগে ধানের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ। এখন তো মণ প্রতি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। স্বাধীনতার পরে কৃষকরা কখনো ধানের এতো দাম পায়নি। এটি একটি বিশাল অর্জন।

‘দ্বিতীয়ত, আমরা এবার কিছু উন্নত জাতের ধান কৃষকদের দিয়েছি। সেগুলো হলো ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৭২, ব্রি ধান ৭৫ এবং ব্রি ধান ৮৭। এই ধানগুলো খুবই উচ্চ ফলনশীল জাতের। এই চারটি জাতের মধ্যে ব্রি ধান ৮৭ জাতটাই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ মণ করে উৎপাদন হয়। আমরা ভালো মানের জাত কৃষকদের দিয়েছি। তারপর সার এবং কীটনাশক সহজলভ্য ছিল। সারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষকরা সময় মতো ফসলে সার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। ’

তৃতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। কার্তিক মাসে বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে আগাম শীতের শাকসবজির কিছুটা সমস্যা হলেও ধানের জন্য অনেক লাভ হয়েছে। বিশেষ করে যে কৃষকরা একটু বিলম্বে আবাদ করেছেন তাদের জন্য বেশ লাভ হয়েছে এই কার্তিকের বৃষ্টি। ফলস খুবই ভালো হয়েছে। এই বৃষ্টি না হলে ধান স্বাভাবিকভাবেই খরায় পড়তো এবং ফসল এতটা ভালো হতো না। কার্তিকের বৃষ্টি আমাদের জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে।

এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে তিনবার বন্যা হয়েছে। আমাদের এদিকে বন্যা হয়নি। ফলে আবহাওয়া এবং প্রকৃতি আমাদের সম্পূর্ণ অনুকূলে ছিল। যথাসময়ের বৃষ্টিপাত, খরা না থাকা, কোনো পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকা, সার এবং কীটনাশক যথাসময়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো, সর্বপরি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ সরবরাহ করা এবং ধানের উচ্চ মূল্য পাওয়ার জন্য কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়গুলোই এই সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে। মৌলভীবাজারে আমনের এতো ফলন আগে কখনও হয়নি। কৃষকরা আনন্দের সাথে তাদের কষ্টার্জিত ফলন ঘরে তুলতে পারছেন বলেও এসময় উল্লেখ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২০
বিবিবি/এইচএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।