রাজশাহী: নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়নি, আত্মহত্যাই করেছেন মোফাজ্জল হোসেন। এমন কারণ উল্লেখ করে তার মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ।
গত ২৯ নভেম্বর সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কক্ষে মারা যায় ওই যুবক। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে দামকুড়া থানা পুলিশ। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
নিহত মোফাজ্জল রাজশাহীর তানোর উপজেলার যুগলপুর গ্রামের ইসরাফিল মণ্ডলের ছেলে। মৃত্যুর ১২ দিন আগে পবার হরিপুর ইউনিয়নের নলপুকুর গ্রামে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গেলেও মোফাজ্জলের স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে আসেন। নববিবাহিত স্ত্রীকে নিতে গেলেও তিনি আর স্বামীর সঙ্গে যেতে চাচ্ছিলেন না।
এরপরও মোফাজ্জল তাকে নিতে শ্বশুরবাড়ি যান। বিষয়টির সমাধানে ২৮ নভেম্বর ইউপি কার্যালয়ে দুইপক্ষের লোকজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসেছিলেন। তখন চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল বলেছিলেন, মোফাজ্জলকে দেনমোহরের টাকা দিয়ে ফিরে যেতে হবে। যতক্ষণ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না হচ্ছে ততক্ষণ তিনি ইউপি কার্যালয়েই আটক থাকবেন। টাকা না দিলে তাকে মাদক দিয়ে পুলিশে দেওয়া হবে। ওই রাতে মোফাজ্জলকে ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রাখেন চেয়ারম্যান। ভোরে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।
স্বজনদের অভিযোগ, মোফাজ্জলকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে নিহতের ভাই উজ্জল বাদী হয়ে দামকুড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় নিহত মোফাজ্জলের শ্বশুরকে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিলকে।
এছাড়া মামলায় মোফাজ্জলের স্ত্রী এবং শাশুড়িসহ অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। এরই মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ফরেনসিক বিভাগ থেকে পবার দামকুড়া থানায় নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। আর এতে উল্লেখ করা হয়েছে মোফাজ্জল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তবে থানা থেকে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কথা জানানো হলে- এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন মোফাজ্জলের স্বজনরা।
নিহত মোফাজ্জলের ভাই তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বোন নেই। তারা তিন ভাই। তাদের সুখের সংসার। মোফাজ্জল আদরের ছোট ভাই। তার আত্মহত্যা করার কোন কারণ নেই। টাকার বিনিময়ে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে। এই রিপোর্ট তারা মানেন না। তারা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঠিক তদন্ত এবং তার ভাই হত্যার বিচার চান।
তবে দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি বিষয়টি এমন না। তাদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান দামকুড়া থানার এই পুলিশ কমকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২০
এসএস/এমআরএ