বরিশাল: ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বরিশাল নগরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনিতে নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি ‘স্মৃতি ৭১’র উদ্বোধন করা হয়েছে।
ওয়াপদা কলোনিতে বাঙ্কার ও টর্চারসেলের সংস্কার কাজ শেষে মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় বেলুন উড়িয়ে নতুন নামকরণে ‘স্মৃতি ৭১’র ফলক উন্মোচন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিসিসি মেয়র বলেন, ১৯৭১ সালে এ টর্চারসেলে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে তা নতুন প্রজন্মের জানা প্রয়োজন। আর তাদের জন্যই এটাকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা দেশটাকে যেমন স্বাধীন পেয়েছি, সেরকম কিন্তু ছিল না। আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, আমার কাছে যেটা খারাপ লাগে সেটা সরাসরি বলে দেই, এটাই হয়তো আমার সমস্যা। ছোটবেলায় শহীদ বেদিতে ফুল দিতে গিয়ে বাসা থেকেই জুতো রেখে খালি পায়ে আসতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছে। এখন দেখা যায় একহাতে জুতা নিয়ে অন্য হাত দিয়ে বেদিতে ফুল দিচ্ছে। সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। বাংলাভাষা ও স্বাধীনতার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সম্মান দিতে হবে।
এসময় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরিশাল জেলা কমান্ডার শেখ কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ'৭১ এর বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘোষ (পুতুল), সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহফুজুল আলম বেগ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস, পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম ইকবাল, নাট্যজন সৈয়দ দুলাল ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, গন্যমান্য ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বরিশালের নিরস্ত্র মানুষদের ধরে এনে এ টর্চারসেল নির্মম নির্যাতন করা হতো। পাশাপাশি হত্যা করে পাশের সাগরদি খালে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। নারীদের এনে সম্ভ্রমহানি করে হত্যা করে খালে ফেলা দেওয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধের নির্মমতার সাক্ষী এ টর্চারসেলটি অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দাবির মুখে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সহযোগিতায় এ বাঙ্কার ও টর্চারসেল সংস্কার ও সংরক্ষণ করে বরিশাল সিটি করপোরেশন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২০
এমএস/ওএইচ/