ঢাকা: জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে বর্ধিত মহীসোপানে বাংলাদেশের সীমা নির্ধারিত হলে বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ অন্বেষণ করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ, যা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সম্প্রতি ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩৮তম প্লেনারি সভায় ‘সমুদ্র আইন’ বিষয়ক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।
সভায় জাতিসংঘের মহীসোপন সীমা বিষয়ক কমিশনে বঙ্গোপসাগরে বর্ধিত মহীসোপানে বাংলাদেশের সীমা সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্য দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আশা প্রকাশ করেন, বর্ধিত মহীসোপানের নতুন সীমা ‘সুনীল অর্থনীতি’র সম্ভাবনাগুলোকে ঘরে তুলতে নতুন সুযোগ এনে দেবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে পেরেছে। এ সংক্রান্ত সংশোধিত সব তথ্য জাতিসংঘে জমা দেওয়া হয়েছে।
সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সভায় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, ক্রমাগত সমুদ্র-স্তরের উত্থান সুপেয় পানি, খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য এবং জীবিকা সম্পর্কিত বিদ্যমান দুরাবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এজেন্ডা ২০২০- এর সমায়ানুগ ও কার্যকর বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেহেতু সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বাড়ার জন্য মনুষ্য সৃষ্ট কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী, তাই এর সমাধানও মানুষকেই করতে হবে। এ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনের বিভিন্ন বিধি-বিধান এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও প্যারিস চুক্তি সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের সমন্বিত, সময়োপযোগী ও কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বাংলাদেশ সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বাড়ার মতো নাজুক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। এ নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত ২০০৯ সালের জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনাসহ বিভিন্নমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
দেশের সমুদ্র-সম্পদের সদ্ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেরিটাইম জোন আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
সমুদ্র এবং এর বিশাল সম্পদকে বিশ্বজনীন সম্পদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা সমুদ্র সম্পদের ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর ব্যবহার, সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ, সমুদ্র-পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সুরক্ষাসহ জাতীয় সমুদ্র সীমার বাইরে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারকল্পে আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক আইনি দলিল প্রণয়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বাড়া মোকাবিলায় আইন ও নীতিগত কাঠামোর বাস্তবায়নার্থে সক্ষমতা বিনির্মাণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া এবং অনিয়মিত অভিবাসনে সমুদ্রপথের অপব্যবহারসহ সমুদ্র সুরক্ষায় অব্যাহত হুমকি মোকাবিলার বিষয়ে জোর দেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। চলমান করোনা ভাইরাস অতিমারির প্রেক্ষাপটে সমুদ্র সম্পদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ বিশেষত উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশাজীবিদের জীবিকা ও কর্মসংস্থান সঙ্কটের বিষয়টি উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সম্মিলিত সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানো ওপর গুরুত্বরোপ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। যাতে তারা এ পরিস্থিতি থেকে আরও ভালো পর্যায়ে উত্তরিত হতে পারে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এ সভায় সামুদ্রিক মৎস্য এবং সমুদ্র আইন বিষয়ক দু’টি রেজুলেশন গ্রহণ করে। বাংলাদেশ উভয় রেজুলেশনে সমর্থন জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
টিআর/আরআইএস