ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুয়াশা কেটে গেলেই শেষ স্প্যান, স্বপ্ন পূরণ দেশীয় অর্থায়নেই  

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
কুয়াশা কেটে গেলেই শেষ স্প্যান, স্বপ্ন পূরণ দেশীয় অর্থায়নেই   পদ্মা সেতু। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চলতি অর্থবছরেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে। এভাবেই দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প।

পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে সিডিভ্যাট ও পরামর্শক খাতেই নতুন করে হাজার কোটি বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে দেশীয় অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
 
স্বপ্নের দূরত্ব মাত্র ১৫০ মিটার। ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর শেষ স্প্যানটি বসলেই পূর্ণতা পাবে স্বপ্নের সেতু। এক স্প্যানেই মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে যাবে। সেতুর মোট পিলার ৪২টি এবং এতে স্প্যান বসবে ৪১টি। চোখের সামনে পূর্ণতা পাবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের সেতু।  

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসাতে প্রস্তুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ও চীনের পতাকায় সজ্জিত স্প্যানটি বুধবার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সেতুর পিলারের কাছে নেওয়া হয়েছে। তবে ঘন কুয়াশা যদি না থাকে তবে বৃহস্পতিবার স্বপ্ন পূরণ হবে। কুয়াশা ছাড়া বৃহস্পতিবার স্বপ্ন পূরণে আর কোনো বাধা নেই। একে একে সব বাধা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘন কুয়াশা ছাড়া শেষ স্প্যান স্থাপনে কোনো সমস্যা নেই। কুয়াশার ফলে  কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সম্ভব না হলে কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর স্প্যান বসবে।
 
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় সাত বছর কাজ এগোয়নি। স্থান নির্ধারণের পর অর্থায়ন জটিলতায় যায় আরো পাঁচ বছর। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতু অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ঠিক পাঁচ বছর পর সব কয়টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ার পথে।
 
সর্বশেষ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিলো ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে একনেক ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারো  ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সবশেষ আরও ১৪শ কোটি টাকা বাড়ে।

দোতলা আকৃতির সেতুর নিচের অংশে রেলওয়ে স্ল্যাব ও উপরের অংশে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। এ স্লাবের ওপর পিচঢালা রাস্তা নির্মাণ করা হবে। একই সময়ে সেতুর নিচের অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে রেলওয়ে। মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।  

অন্যদিকে নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। নদীশাসন কাজে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু পাড়ের ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ মনে করেন পদ্মা সেতু নির্মাণের পরে কৃষিজ দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের পরিবহন সুবিধা হবে। অন্যদিকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ সেতু নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।  অন্যদিকে ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বলছেন পদ্মা সেতু তাদের জন্য আর্শির্বাদ।  এর ফলে কৃষিজ দ্রব্যাদি বাজারজাতের ফলে সঠিক মূল্য পাওয়া যাবে। প্রকল্পের ফলে পরিবহন খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে বিশ্বাস করেন ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ।
 
পদ্মাসেতু নিয়ে পরিমাণগত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে সেতু বিভাগ। আলোচ্য সমীক্ষায় আর্থ-সামাজিক অবস্থার নিবিড় পরিবীক্ষণের জন্য সুবিধাভোগী উত্তরদাতাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, কর্মসংস্থান, যাতায়াতের সময়, আয়-ব্যয় ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
 
সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমডি) সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষায় দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা আইএমইডির সরেজমিনে পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আইএমইডির সহকারী পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টর ২) মো. মশিউর রহমান খান মিথুন প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
 
১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। পরে ২০০৩-০৫ সালে জাইকার মাধ্যমে পরিচালিত সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটির মূল ডিপিপি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের মধ্যেই বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়। এর পরে সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। নদীশাসনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সময়সীমা আবার বাড়িয়ে করা হয় ২০২১ সালের জুন মাস। কয়েক ধাপে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
এমআইএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।