ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে পানিতে ডুবে ১১ মাসে ২৬ শিশুর মৃত্যু, নেই সরকারি পরিসংখ্যান

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
নাটোরে পানিতে ডুবে ১১ মাসে ২৬ শিশুর মৃত্যু, নেই সরকারি পরিসংখ্যান প্রতীকী ছবি

নাটোর: দারিদ্র্য, অসচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবে সারা দেশে প্রতিনিয়ত পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অথচ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার নির্ধারণ বা পরিসংখ্যান নির্ণয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কোনো কার্যকর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।

ফলে সরকারি বা বেসরকারি কোনো দপ্তরেই এ সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান রাখা হয় না।

গত সপ্তাহে নাটোর জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে বিশেষ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর কোনো তথ্য পায়নি বাংলানিউজ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, এ ব্যাপারটি নিয়ে তাদের কাছে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো তথ্য রাখার প্রয়োজন হয়নি। এটা শুধু নাটোর কেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই প্রায় একই চিত্র বলে দাবি করেন তারা।

এদিকে নাটোরের খাল-বিল, নদী ও পুকুর বা ডোবার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটছে অহরহ। চলতি ২০২০ সালের গত ১১ মাসে জেলার সাতটি উপজেলায় অন্তত ২৬ জন বিভিন্ন বয়সের শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। বিশেষ করে চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত এলাকায় এ মৃত্যুর হার বেশি। এতে ১০ বছর বয়সের চেয়ে কম বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে আগস্ট মাসে।  আর অধিকাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বাড়ির পাশের পুকুর কিংবা ডোবা, নদী ও বিলের পানিতে পড়ে।  স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে এসব তথ্য জানা গেছে।

অথচ জেলার সব থানা, হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, পরিসংখ্যান বিভাগ, জেলা প্রশাসনসহ কোথাও এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে কোনো কার্যকর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কোনো দপ্তরেই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর পরিসংখ্যান নেই।

এ নিয়ে নানা রকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনরা। কেউ বলছেন, মা ও অভিভাবকদের গাফিলতি এবং অসাবধানতাই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ। আবার অনেকেই বলেছেন, দারিদ্রতা, অসচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার অনেকাংশে বেড়ে যাচ্ছে।

আর খেলতে খেলতেই বাড়ির পাশের ডোবা, খাল, পুকুর ও বিলের পানিতে পড়ে মারা যায় এসব শিশুরা। শিশুর মা ও অভিভাবকগণ সচেতন থাকলে বা নজরে রাখলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কাজেই শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে চাইলে প্রথমেই পরিবার এবং তার পাশের লোকজনকে সচেতন হতে হবে বলে দাবি করেছেন তারা।

অন্যদিকে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর পরিসংখ্যান না থাকার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনাটি অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে বিবেচিত হয়। যা নিকটস্থ থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করার কথা।  কিন্তু অভিভাবকরা শিশুদের মরদেহ কাটা ছেঁড়া বা ময়নাতদন্তের ভয়ে থানা পুলিশকে এড়িয়ে চলেন।

এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও অবহিত করা হয় না। ঘটনা ঘটার পর পরই মরদেহ দাফন করা হয়। ফলে ঘটনাটি আড়ালেই রয়ে যায়। এজন্য থানা, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদসহ কোনো দপ্তরেই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি নথিযুক্ত হয় না। শুধুমাত্র বজ্রপাত বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সরকারিভাবে তথ্য রাখা হয়।  তবে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু সংখ্যা নির্ধারণে প্রশাসনের ভূমিকা রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।

এ ব্যাপারে নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় কোনো শিশু মারা গেলে অভিভাবকরা মৃত্যু সনদ নিতে পরিষদে আসেন। এ সময় তাদের মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়। তবে কি কারণে মারা গেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের জানানো হয় না। আর পানিতে পড়ে মারা যাওয়া শিশুর মৃত্যু সংক্রান্ত আলাদা কোনো পরিসংখ্যান তাদের অফিসে রাখা হয় না। তার জানা মতে সারা দেশের কোনো ইউনিয়ন পরিষদেই এ সংক্রান্ত তথ্য নেই।  

কারণ এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে নেই। অন্যান্য বিষয়ে তথ্য রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ ব্যাপারে নেই। তবে এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা জরুরি বলে দাবি করেন তিনি।

নাটোরে শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আলো’র নির্বাহী পরিচালক শামীমা লাইজু নীলা জানান, তারা  প্রতিনিয়ত মা ও শিশুকে নিয়ে কাজ করেন এবং শিশুদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করেন। কিন্তু পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত তাদের কাছে নেই। তবে তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরি।

এ জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এর তথ্য ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে চাইলে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে অথবা সামাজিকভাবে এবং পারিবারিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও কাজ করতে পারে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাটোর ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. আক্তার হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ঘটনাজনিত কারণে কোনো শিশুর মৃত্যু ঘটলে সেগুলোর তথ্য তাদের দপ্তরে রাখতে হয়। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর তথ্য বা পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। শুধুমাত্র ডুবুরিরা যে সমস্ত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেন সেগুলোর তথ্য রাখা হয়।  বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তাদের কাছে কোনো খবর আসে না। তাই তারা এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকাও রাখতে পারেন না।

তবে এ বিষয়ে রাজশাহী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দলের কাছে এসব তথ্য থাকতে পারে। তার জানা মতে, গত ১১ মাসে নাটোরের দুটি স্থানে পানিতে ডুবে শিশু নিখোঁজের পর রাজশাহী থেকে ডুবুরি দল এসেছিলো এবং মরদেহ উদ্ধার করেছিলো।  তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকলেও পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা দরকার।

তিনি আরো বলেন, কেবলমাত্র পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতাই পারে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে। সাধারণত শিশুরা পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায় এবং অল্প পানিতে পড়ে গেলেও শিশুরা বাঁচতে পারে না।

নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক শিশুকে নিয়ে আসা হয়। সেগুলো রেজিস্টার্ড খাতায় নথিভূক্ত করা হলেও কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা উল্লেখ করা হয় না। বজ্রপাত বা অন্য কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্টারে তথ্য রাখা হয়। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য হাসপাতালে রাখা হয় না।

তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে চাইলে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। তবে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মশালা অথবা সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ সভা ও প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।

নাটোর জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ পরিচালক মো. শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, এ সংক্রান্ত তথ্য তার দপ্তরে নেই। তার জানা মতে এ নিয়ে কেউ কখনো ভাবেননি। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কারণ এখনো পর্যন্ত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার সম্পর্কে তথ্য রাখার ব্যাপারে সরকারি কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে আসেনি। তবে সরকারিভাবে নির্দেশনা পেলে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনিও পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেন।

নাটোরের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. গোলাম রাব্বী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে আলাদা করে কোনো তথ্য নথিতে রাখা হয় না। এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। তাছাড়া বিষয়টি থানা পুলিশের দায়িত্ব, এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।

তিনি আরো বলেন, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে স্বজনরা দাফন কাজ সম্পন্ন করেন। এটি একটি অপমৃত্যু জেনেও থানা পুলিশকে অবহিত থেকে বিরত থাকেন। ফলে শিশুর মৃত্যুর পরিসংখ্যান নির্ণয় করা যায় না।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু নিয়ে সরকারিভাবে কোনো কার্যকর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে থানাগুলোতেও পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। এছাড়া পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু বলেই বিবেচিত হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর অভিভাবকরা থানায় কোনো অভিযোগ বা তথ্য দেন না। ফলে বিষয়টি আড়ালেই রয়ে যায়। এসব কারণে থানাগুলোতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা দরকার।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে সরকারি কোনো দপ্তরে তথ্য নেই। কারণ এ সংক্রান্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। তাই কোনো অফিস এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না।

তবে শিশু মৃত্যু রোধে করণীয় প্রসঙ্গে বলেন, পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. আমিনুর রহমানের এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে জানা যায়, দারিদ্র্য, অসচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবের কারণে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের শিশুরা ডুবছে বাড়ির ২০ গজের মধ্যে এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটছে মূলত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে।

কারণ এ সময়ে মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজন এবং শিশুদের পরিচর্যাকারীরা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও উদ্বেগের বিষয় হলো বাড়ির আশপাশের ডোবা, নালা, খাল, বিল সবকিছু উন্মুক্ত। কাজেই শিশুরা অন্যদের অলক্ষ্যে অবাধে জলাশয় চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়।  দিনের প্রথম ভাগে শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, প্রতিবছর ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের ২০ শতাংশের বয়স ৫ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম।  বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী মোট শিশু মৃত্যুর ৪৩ শতাংশ মারা যায় পানিতে ডুবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বছরে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। আর ১ লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্ন ভাবে আহত হয়।

গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় সাংবাদিকদের নিয়ে এক অবহিতকরণ কর্মশালার আয়োজন করেন। ওই কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে আসে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, দেশে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর পরিসংখ্যান কোথাও নেই, তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর একটি পরিসংখ্যান তৈরি করে। একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই এ ব্যাপারে কিছুটা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।