ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভোলায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২০
ভোলায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ভোলায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: এক সময় ভোলার গ্রাম-গঞ্জে মাঠে ঘাটে খেজুর গাছ দেখা গেলেও কালের আবর্তে তা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ।

এখন আর তেমন একটা খেজুর গাছ দেখা যায় না। জ্বালানির জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা, প্রাকৃতিক কারণ, পরিবেশ দুষণ, আবাদি জমিতে বসতভিটা ও ইট ভাটার কারণে দৃষ্টিনন্দন খেজুর গাছ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন আর গাছি বা শিয়ালদের রস সংগ্রহ করতে দেখা যায় না। তারাও পেশা পাল্টে নিচ্ছেন।

ভোলা সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম ধনিয়া, তুলাতলী, গঙ্গাকীর্তি, বলরামসুরাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতে গাছিরা খেজুর গাছকে বিশেষ কায়দায় ছাল তুলে রস সংগ্রহের উপযোগী করে তোলেন। পরে সেখানে হাড়ি বসিয়ে রস সংগ্রহ করা হতো। তারপর ওই রস থেকে খেজুরের গুড় তৈরি করে তা বিক্রি হতো হাট-বাজারে। কেউ বা কাঁচা রস কিনে নিতেন গাছিদের কাছ থেকে। কেউ বা গাছের রস রক্ষার জন্য রাত জেগে খেজুর গাছ পাহারা দিতেন। পুরো শীত মৌসুম জুড়েই থাকতো খেজুর গাছের কদর। এখন শীত মৌসুম চলছে কিন্তু দেখা মিলছে না গাছিদের।

কালাসুরা গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধু সোনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমাদের অনেক খেজুর গাছ ছিলো কিন্তু এখন আছে মাত্র ১০টা। অনেক গাছ মরে গেছে। এখন মাত্র তিনটি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হচ্ছে।

মিল বাজার এলাকার মোতাছিন বলেন, আগে এখানে নদী ভাঙন ছিলো, তখন মানুষ অনেক গাছ কেটে নিয়ে গেছে, কেটেছে খেজুর গাছও। তাই গাছ কমে গেছে। আমাদের এলাকায় ১০ হাজারের মত খেজুর গাছ ছিলো, এখন শতাধিকের বেশি হবে না।

গাছি মাহমুদ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ২০ বছর ধরে খেজুরের গাছ থকে রস সংগ্রহের কাজ করছি, আগে প্রচুর পরিমাণে রস সংগ্রহ করতাম। পুরো শীতের মৌসুম কাটতো খেজুর গাছ নিয়ে। এখন মাত্র ২০-৩০ টি গাছ নিয়েই আছি। খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও গাছ না থাকায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ইটভাটা মালিকেরা খেজুর গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে, অনেকে বেশি টাকার আশার গাছ বিক্রি করছেন। আবার অনেক সময় অজ্ঞাত কারণে গাছ মরে যাচ্ছে।

বলরাম সুরা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ কাজল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগেও যে দিকে তাকাতাম সে দিকেই ছিলো খেজুর গাছ। শীতের দিনে তো গাছে গাছে ছিলো হাড়ি। গাছ ছোলার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন গাছিরা। রস বিক্রি আর গুড় তৈরির ধুম পড়ে যেতো পুরো এলাকায়। রসের জন্য মানুষের সিরিয়াল পড়তো। কিন্তু এখন আর সেই চিত্র নেই। নানা কারণে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, সামন্য কিছু গাছ থাকলেও আগের মত রস সংগ্রহের সেই ধুম নেই।  

স্কুল শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খেজুর গাছ একদিকে গ্রামের শোভা বর্ধন করে অন্যদিকে মুখরোচক খাবার রসও পাওয়া যায়। এখনই যদি খেজুর গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন করে গাছ রোপণ করা না হয় তাহলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে খেজুর গাছ।

এ ব্যাপারে ভোলা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৈহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খেজুর গাছ না কাটার জন্য আমরা জনগনকে সচেতন করছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের অভিযানও চলে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। কেউ যদি আইন অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া অন্য কারণেও যদি কাটে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালানো হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২০
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।