নরসিংদী: ১২ ডিসেম্বর। এই দিনে মুক্ত হয়েছিল ঢাকার নিকটতম জেলা নরসিংদী।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে নরসিংদীতে বর্বর গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হনাদার বাহিনী। হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে মুক্তিযোদ্ধারা ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। স্থলপথে মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনীর বোমারু বিমান নরসিংদী শহরে বোমাবর্ষণ শুরু করে।
তখন গোটা শহরে পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। এর পরেই পাকিস্তানিরা নরসিংদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘাঁটি স্থাপন করে। দালাল আর রাজাকারদের যোগসাজশে হানাদার বাহিনীরা প্রতিদিন চালায় ধর্ষণ,লুটতরাজসহ গণহত্যা। নরসিংদীর এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে হানাদারদের নিষ্ঠুর ছোবল পড়েনি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা ব্রিজ, শিলমান্দী মাছিমপুর বিল, খাটেহারা ব্রিজ, মনোহরদীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীর, শিবপুরে ঘাসিরদিয়া, পুটিয়া, বেলাব আড়িয়াল খাঁ নদীর পাশে, রায়পুরা মেথিকান্দা রেল স্টেশনে রয়েছে সেই ক্ষতচিহ্নের গণকবর। কিন্তু অধিকাংশ গণকবরই রয়েছে অবহেলায়।
দীর্ঘ নয় মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ডযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হন ১১৬ জন বীর সন্তান। এসব স্থানে স্বাধীনতার ইতিহাস ধরে রাখতে অন্তত প্রতিটি উপজেলায় স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের।
সেক্টর কমান্ডার ৭১, নরসিংদীর সভাপতি মোতালিব পাঠান বাংলানিউজকে বলেন,জীবন বাজি রেখে যে যোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর তাদের গণকবরগুলো রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। কোথাও কোথাও রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও থমকে আছে। দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি এসব স্মৃতি রক্ষায়। তাইতো বীর সেনাদের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সব সমস্যার সামাধানে কাজ করছে সরকার। বীর মুক্তিযোদ্ধারে নামে সড়ক নির্মাণ ও গণকবরগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। প্রতি বছরের মতো এবারও অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে পালন করা হবে নরসিংদী মুক্ত দিবস।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
এএ