ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ওসি প্রদীপের ইয়াবা অপকর্ম জেনে যাওয়ায় সিনহাকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
ওসি প্রদীপের ইয়াবা অপকর্ম জেনে যাওয়ায় সিনহাকে হত্যা

ঢাকা: টেকনাফে ওসি প্রদীপের মানুষের ওপর নির্যাতনের (গ্রেফতার বাণিজ্য) ঘটনা ও তার ইয়াবাকারবারির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ জানতে পেরে যাওয়ায় মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যা করা হয়। ওসি প্রদীপের পরিকল্পনায় পরিদর্শক লিয়াকত সিনহার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, সিনহা তার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য বস্তুনিষ্ঠ একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করছিলেন। পাশাপাশি ইয়াবা, মাদক ব্যবসা ও ওসি প্রদীপের বিভিন্ন নির্যাতন সম্পর্কে যে ধরনের কনটেন্ট তৈরি করেছিলেন তা সবই ওসি প্রদীপের জন্য বড় ধরনের হুমকি ছিল।

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

তিনি বলেন, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে পাহাড়ে গিয়ে ওসি প্রদীপের নানা নির্যাতন ও ইয়াবাকারবারের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পান সিনহা। এ সময় ওসি প্রদীপও সিনহার বিষয়ে জানতে পারেন এবং তাকে এ নিয়ে কাজ না করার জন্য বলেন। এ বিষয় ওসি প্রদীপের বক্তব্য নিতে চান সিনহা। পরে ওসি প্রদীপ তার কর্সস্থলে বসেই সিনহাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়েছিলেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ওসি প্রদীপের দু’টি ভূমিকা ছিল। ইয়াবা বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, গ্রেফতার হয়রানিসহ যে ধরনের কনটেন্ট সিনহারা সংগ্রহ করেছিল তা তাকে (ওসি প্রদীপ) বিচলিত করেছিল। সিনহাকে হত্যার জন্য তিনি পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্র করেছেন। আর গুলির পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ওসি প্রদীপ। তখনও জীবিত ছিলেন সিনহা। মৃত্যু নিশ্চিতে লোক দেখানো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সিনহাকে। সেখানেই সিনহার মৃত্যু হয়।

গত ৩১ জুলাই রাতে মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, রাতে হত্যাকাণ্ডের পর পরই ওসি প্রদীপ কুমার ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখনও সিনহা জীবিত ছিলেন। সেখানে ওসি প্রদীপ সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সেখানে অনেক সময় পার করার পর তাকে লোক দেখানোভাবে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ওসি প্রদীপের নির্দেশে ওই রাতেই নীলিমা রির্সোটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরপর রাতে টেকনাফ থানায় দু’টি ও রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হবার পরও ওসি প্রদীপের নির্দেশেই সিনহার মাকে রাতেই ফোন করে পুনরায় পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

এভাবে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বয়ান চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) তুলে ধরেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, তদন্তে আমরা ডিজিটাল যেসব কনটেন্ট পেয়েছি তা সবই একজন (মেজর সিনহা) মানুষকে নিদোর্ষ করার জন্য যথেষ্ট। এ হত্যা মামলার তদন্তে সব বিষয় বিশ্লেষণ করে নিরপেক্ষভাবে তন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে এ চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সিনহা হত্যার সঙ্গে অন্য কোনো অপকর্ম বা অপরাধের সাদৃশ্য খোঁজা অমূলক। সেই রাতে সিনহার মাকেও ফোন করা হয়েছিল। পরিচয় নিশ্চিত হবার পরেও তাকে হত্যা করা হয় মূলত: পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে। সিনহা সম্পর্কে আপনারা সবাই জেনেছেন। ওসি প্রদীপ যা করেছেন তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

কী ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল সিনহাকে জানতে চাইলে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, অনতিবিলম্বে সিনহাদের ইউটিউব চ্যানেলের কাজ বাদ দিয়ে টেকনাফ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। না হলে তাদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে মর্মে সরাসরি হুমকি দেয় ওসি প্রদীপ।

ডিজিটাল কনটেন্ট পাবার ক্ষেত্রে ল্যাপটপ ফরেনসিক করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ল্যাপটপের ডিজিটাল কনটেন্ট না পেলেও সাক্ষ্যপ্রমাণে ও জবানবন্দিতে এটা স্পষ্ট পরিকল্পিত হত্যা। ডিজিটাল কনটেন্ট ডিলেট করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের একটি অডিও প্রকাশ পেয়েছিল। সে বিষয়ে তদন্তে কী মিলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগ থেকেই ওসি প্রদীপ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এসেছিল। তা নিয়ে এসপি মাসুদ অত্যন্ত উদাসীন ছিলেন। পাশাপাশি স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাসহ স্থানীয়দের নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যম আসার পরেও পুলিশ সুপার সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। এছাড়া ঘটনা ঘটার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে আহত সিনহাকে চিকিৎসা ব্যবস্থা না করাসহ বিভিন্ন বিষয় তদন্ত কর্মকর্তা আমলে এনেছেন। পুলিশ সুপারের অপেশাদার আচরণ ও দায়িত্ব পালনে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সার্বিক ঘটনা বিবেচনায় একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদের পুরা ঘটনা তদারকিতে ঘাটতি ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদের আচরণের বিরুদ্ধে ও দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
এসজেএ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।