ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুন্দরবনে হরিণের সঙ্গে বানরের বন্ধুত্ব!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২১
সুন্দরবনে হরিণের সঙ্গে বানরের বন্ধুত্ব!

সুন্দরবন থেকে ফিরে: নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন নামতেই বানরগুলো দলবেঁধে নেমে আসে ট্রলারের দিকে। ফরেস্ট ক্যাম্প সংলগ্ন পল্টুনে ভিড়ানো ট্রলার ও লঞ্চে আগতদের দেখেই ছুটে আসে।

তাড়া দিতেই শুরু হয় তাদের স্বভাবসুলভ চাঞ্চল্য, দুষ্টুমি ও নাচ। সুন্দরবনের দূরন্ত এ প্রাণীটি মানুষ দেখলেই খাবারের লোভে ছুটে আসে। ট্রলার চালকরা জানান, মাঝে মধ্যে পর্যটকরা বনে ঢুকলে বানর ট্রলারে ডুকে তাদের খাবার, পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বনের মধ্যে লুকিয়ে যায়। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে হরিণ পালিয়ে গেলেও বানর অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। তারপরও বানরের বাঁদরামি ভ্রমণপিপাসুদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে। আর এ বানরকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুন্দরবনে নলিয়ান, করমজল, হাড়বাড়িয়াসহ প্রায় পর্যটন স্পটগুলোতে। বনের ভেতরে দুই একদিন থাকলে চোখে পরবে সুন্দরবনে হরিণের সঙ্গে বানরের বন্ধুত্বের দৃশ্য। হরিণের জন্য বানর গাছ থেকে বিভিন্ন পাতা ও ফল ফেলে দেয়। সুন্দরবনে হরিণের প্রধান শত্রু হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাঘ বেশি পছন্দ করে হরিণ শিকার করতে। বাঘ অধিকাংশ সময় খুব গোপনে আক্রমণ করে। ফলে হরিণ সাবধান হওয়ার সুযোগ পায় না। বানর গাছের উপরে থাকে বলে শিকারি বাঘকে সহজেই দেখতে পারে আর তখন সে শব্দ করে নিচে থাকা হরিণদের সতর্ক করে দেয়। এর কারণে হরিণ অনেক সময় বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। যে কারণে বানরকে হরিণের বন্ধু বলা হয়। সুন্দরবনে প্রাণীদের তালিকায় হরিণের পরই বানরের স্থান৷ সুন্দরবনে এরা হরিণের সঙ্গে সহাবস্থান করে থাকে৷ এজন্য হরিণকে বানরের সুহৃদও বলা হয়৷বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনে প্রায় ২ লাখের বেশি হরিণ রয়েছে। এ বনে চিত্রা ও মায়া দুই ধরনের হরিণ রয়েছে। বনের সর্বত্রই এর বাস। তবে বেশি দেখা যায় মায়া হরিণদের। সাধারণত বনের কটকা, করমজল, দুবলারচর, হিরণপয়েন্ট, কচিখালী, সুপতি, ঢাংমারি এলাকায় হরিণের বেশি বিচরণ।

সুন্দরবনের হরিণ মানুষের মনকে এক পলকে কেড়ে নেয়। হরিণেরা নিশাচর বা দিবাচর। ঘাস, লতাপাতা, ওড়া, কেওড়া, গোল, ধুন্দল, গেউয়া গাছের ফল খুব পছন্দ হরিণের। এরা ছোট ছোট দলে বাস করে। এরা যাওয়ার পথে পায়ের চিহ্ন রেখে যায়। অত্যন্ত আরামপ্রিয় এবং সৌখিন। হরিণ অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন এবং সজাগ। বনের হরিণ বাঘের অন্যতম প্রধান শিকার। তাই বাঘের আক্রমণের পূর্বাভাস পেলেই তারা ক্ষিপ্রগতিতে পালিয়ে যায়। এমনকি মানুষের উপস্থিতি টের পেলেও এরা বনের ভেতর চলে যায়। করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল সুন্দরবন৷ এ বনের জলে-স্থলে বাস করে নানা রকম বন্যপ্রাণী৷ তার মধ্যে পর্যটকদের চোখের সামনে যেগুলো বেশি ঘোরে তা হলো হরিণ ও বানর। বনের মধ্যে হরিণের বিচরণ। বাঘ হরিণের চিরশত্রু হলেও ব্যতিক্রম বানরের সঙ্গে সম্পর্ক। বনের বানরেরা কেওড়া গাছে উঠে নিজেরা যেমন পাতা ও ফল খায়, গাছের নিচে অপেক্ষমাণ হরিণের জন্য অনুরূপভাবে গাছের ফল বা পাতা নিচে ফেলে দেয়। হরিণের সঙ্গে বানরের সম্পর্ক চমৎকার। কোনো বিপদের সংকেত পেলে বানর ডাক দিয়ে হরিণকে সতর্ক করে দেয়। বিশেষ করে বাঘ এলে। হরিণের পিঠে চড়ে বানর ওদের শরীরের উকুন বেছে খেয়ে ফেলে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২১
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।