ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্বস্তির খুলনায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
স্বস্তির খুলনায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি! স্বস্তির খুলনায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি!

খুলনা: না, আর পারছি না; দুই মাস ধরে ড্রেন প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। সাত দিন ধরে রাস্তার উপর কাঁদামাটি ফেলে রেখেছে; কোনো ক্রেতা ঢুকতে পারছে না, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সংস্কার কাজ চলা খুলনা মহানগরের বড় বাজারের ক্লে রোডের ব্যবসায়ী মো. মিলন।

তিনি বলেন, শহরের ব্যস্ততম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার কাজের জন্য অধিক জনবল নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তা না করে কিছুসংখ্যক লোক দিয়ে ধীরগতিতে কাজ করা হচ্ছে। আর এতে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে।

একইভাবে সিমেট্রি রোডের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ব্যস্ত এই নগরের মানুষজন বড় বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে যাওয়ার জন্য এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সেই রোডের ড্রেন প্রশস্তকরণ কাজের ধীরগতিতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে এখন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

নগরের শামসুর রহমান রোড, বাবু খান রোড ও সাউথ সেন্ট্রাল রোডেও চলছে ড্রেন প্রশস্তকরণের কাজ। সেখানেও ধীরগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। নগরজুড়ে কোনো রাস্তার উন্নয়ন কাজ, কোনো রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি আর কোনো রাস্তায় ড্রেন প্রশস্তকরণ কাজ চলায় পুরো নগরজুড়ে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এ কারণে অসহনীয় যানজট তৈরি হচ্ছে শহরে। খালিশপুর এলাকায় ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির এক বছর পর সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে গ্যাসের পাইপ বসাতে সেই সড়ক আবারও ক্ষত-বিক্ষত করেছে নর্থ ওয়েস্টার্ন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)।

ভুক্তভোগীরা জানান, ব্যস্ত সড়কগুলোতে প্রতিদিনই ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় এবং ফেরার পথে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিসগামী ও অফিসফেরত যাত্রীদের। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতায় খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগও পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর।

নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি মেয়র আন্তরিক থাকলেও কর্পোরেশনের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে নগরের উন্নয়ন কাজগুলো ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

জানা গেছে, খুলনা মহানগরের সড়কগুলোতে সামনে আবার খেঁড়াখুঁড়ি করবে পিডিবি। খালিশপুর থেকে নতুন রাস্তা মোড়, সেখান থেকে মুজগুন্নী মহাসড়ক হয়ে বয়রা মোড়, বয়রা মোড় থেকে জলিল সরণি হয়ে মোস্তর মোড়, সেখান থেকে রূপসা শহর বাইপাস হয়ে জিরো পয়েন্ট, সেখান থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক দিয়ে হোগলাডাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক খোঁড়া হবে। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা আবার সড়ক খুঁড়বে। তখন বাড়বে নগরবাসীর আরও ভেগান্তি।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে উঠিয়ে রাখা, নির্মাণ-সামগ্রী রাস্তায় রাখা, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে। যানজট ও ধুলাবালিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে। স্বস্তির খুলনা শহর এখন অবর্ণনীয় ভোগান্তির নগরে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন কাজের সাথে জড়িত সংস্থাগুলোর সমন্বয় জরুরি। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে কাজের ব্যয়ও কমে যাবে, সঙ্গে কমবে নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ।

খুলনা মহানগরের সব সড়ক, ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম বর্ষা মৌসুমের আগেই মানসম্মতভাবে সমাপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।

কতগুলো ড্রেন ও সড়কে কাজ চলছে এবং কবে নাগাদ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. এজাজ মোরশেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের সচিবের। আমি কোনো তথ্য দিতে পারবো না। মেয়র মহোদয় সাংবাদিকদের তথ্য দিতে নিষেধ করেছেন, যা বলার তিনি বলবেন। আমি বললে ভুল বোঝাবুঝি হয়।

এর আগে প্রধান প্রকৌশলী মো. এজাজ মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেই বলেন মিটিংয়ে আছি। বিকেলে যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তখনও মিটিংয়ের কথা বলেন তিনি। মিটিং প্রসঙ্গে এই প্রকৌশলী বলেন, আমাদের সবসময় মিটিং থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।