ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পাতে ভাত নেই শ্রমজীবী মানুষের

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২১
পাতে ভাত নেই শ্রমজীবী মানুষের

রাঙামাটি: এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা নামক ভাইরাস সারাবিশ্বকে কাঁপিয়ে চলেছে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে জীবন ব্যবস্থা সবই আজ ধ্বংসের পথে।

চারদিকে মৃত্যুর মিছিল, মানুষের আর্তনাদ-হাহাকার। দিন যতোই বাড়ছে ততোই এ ভাইরাসে সংক্রমণের হার বাড়ছে।

বিশ্বের অন্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও মানুষকে সুরক্ষা দিতে কয়েক দফা লকডাউন দিয়েছে। লকডাউনের উদ্দেশ্যে মানুষের গণজমায়েত বন্ধ করা এবং ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করা। কিন্তু লকডাউন ভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচালেও বিপাকে পড়েছেন দেশের শ্রমজীবী মানুষেরা।  

এসব মানুষেরা প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রম বিক্রি করে সংসারের চাকা ঘোরায়। প্রতিদিন সকাল হলে তাদের মাথায় চিন্তার ভাজ পড়ে পরিবারের সদস্যদের পাতে ভাত দিতে হবে। এ চিন্তা মাথায় নিয়ে প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করে যান তারা। কোনো একদিন শ্রম বিক্রি করতে না পারলে তাদের চুলায় আগুন জ্বলে না। পরিবারের সদস্যদের পাতেও জোটে না ভাত। কেউ দয়া করে তাদের পাতে একবেলা ভাতের ব্যবস্থা করে দেয় না।

বাংলাদেশে লাখ লাখ শ্রমিক রয়েছে। তারা প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করে সংসারের চাকা ঘোরায়। তাই এসব মানুষের পেটের দায়ের কাছে মৃত্যুকুপের নেই কোনো ভয়। তাদের কাছে ভাইরাসের নেই ভয়। তাদের একটাই ভয়; পরিবারের সদস্যদের মুখে আহারের ব্যবস্থা করে দিতে না পারা। তাই তারা ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শ্রম বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন।

এসব শ্রমজীবী মানুষের এখন গলার কাঁটা লকডাউন। সরকার যখন মানুষকে বাঁচাতে লকডাউন দিয়ে রেখেছে তখনই এসব শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কারণ লকডাউন তাদের পেটের ভার বহন করবে না। ঘর থেকে বের না হয়ে শ্রম বিক্রি না করলে তারা খাবে কি। তাই এ লকডাউন তাদের কাছে আর্শিবাদ নয়; অভিশাপ হিসেবে নেমে এসেছে।

মৎস্য শ্রমিক সিরাজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে করোনার ভয় নেই; কিন্তু পেটের ভয় আছে। একবেলা কাজ করতে না পারলে বউ-বাচ্চাদের মুখে আহার তুলে দিতে পারবো না। এখন করোনার থেকে বাঁচতে সরকার দেশে লকডাউন দিয়েছে এটা বুঝি আমাদের ভালোর জন্য। কিন্তু কি করবো? কাজ বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের তো একবেলা মুখে কেউ খাবার তুলে দিবে না।

ঠেলাগাড়ি চালক রমজান আলী বলেন, লকডাউন, করোনা কিছুই বুঝি না। ঘরে ভাত নেই, রাস্তায় নামলে পুলিশ দৌঁড়ায়। কেউ আমাদের দুঃখ বোঝে না। আমার ঘরে চারদিন ধরে চাল নেই। প্রতিদিন ঠেলা চালিয়ে বউ-বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেয়। এইভাবে চলতে থাকলে আমরা খাবো কি? আমার মতো এসব শ্রমজীবী মানুষের দায়ভার নেবে কে?

রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকার ফল ব্যবসায়ী হাসান বাংলানিউজকে জানান, বিক্রি নেই, মন ভাল নেই। ফলগুলো পঁচে যাচ্ছে। লকডাউনে মানুষ বাজারে আসছে না। মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ। তারা কেনার সামর্থ হারিয়েছে। তারা না কিনলে আমাদের ব্যবসা হবে কি করে। আমরা ভাল নেই। কবে আমরা এ ক্রান্তিকাল থেকে মুক্তি পাবো জানা নেই।

বনরূপা এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, করোনা, লকডাউন আর পারছি না। একদিকে মৃত্যুর ভয় অন্যদিকে ব্যবসা নেই। কি করবো জানি না। কখন এর থেকে পরিত্রাণ পাবো জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।