ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এমপি জাফরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি, চকরিয়ায় সড়কে ৩ ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
এমপি জাফরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি, চকরিয়ায় সড়কে ৩ ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ

কক্সবাজার: কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাত ৮টা থেকে বিক্ষোভ করছে তার অনুসারী ও সমর্থকেরা।

এ সময় তারা মহাসড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।

এতে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার উভয় দিক থেকে আসা শত শত যানবাহন কয়েকঘন্টা ধরে আটকা পড়েছে। ফলে সড়কে আটকা পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে উভয় দিক থেকে আসা হাজার হাজার যাত্রী।

সর্বশেষ রাত ১২টায় এমপি জাফর মাইকে তার নেতাকর্মীদের প্রতি গাড়ি ছেড়ে দিতে আহবান জানালে যান চলাচল শুরু হয়।

জানা গেছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সরওয়ার আলমকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একই সাথে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে জেলা আওয়ামীলীগ।

দলীয় সূত্র বলছে, গত মঙ্গলবার (৮ জুন) চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও চকরিয়া পৌরসভার নৌকার মনোনীত মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী ওপর হামলা ও দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সংসদ সদস্য জাফর আলমকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম- কক্সবাবাজার মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয়। রাত সাড়ে ৮টা থেকে চকরিয়া পৌর শহর চিরিংগায় বিক্ষোভ চলছিল। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া পাশের পেকুয়া উপজেলায়ও বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। সেখানেও তারা সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে আটকা পড়া যাত্রী রেজাউল আমিন মোরশেদ বাংলানিউজকে জানান, সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টার দিকে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের বাসটি ছেড়ে আসে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চকরিয়া ব্রিজ পর্যন্ত এসে আটকা পড়ে বাসটি। আড়াই ঘণ্টা পার হলেও এখনও একইস্থানে আটকে আছি।

শুধু তাদের বাসটি নয়, শত শত বাস এখানে আটকার পড়ার পর রাত ১২টার দিকে বাস চলাচল শুরু হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ জুন) কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলামকে বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে, যেখানে একপক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার চিংড়ি চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সংসদ সদস্য ধাক্কাধাক্কিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাহেদুল ইসলামের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেফায়েত সিকদার।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধিতা করা ও নির্বাচনী সফরের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সভায় উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলামকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোসলেহ উদ্দিন মানিককে। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িলে পড়লে লিটুর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, মঙ্গলবার রাতে পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে পৌর ভবনের পাশে চিংড়ি চত্বর এলাকায় বসেন চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারসহ ৪০-৫০ জন নেতা-কর্মী।

ওই সময় বেতুয়া বাজার এলাকায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজা শেষে পৌরসভার চিংড়ি চত্বর এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কক্সবাজার-১ আসনের (চকরিয়া—পেকুয়া) সাংসদ জাফর আলম।

ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখে প্লাস্টিকের লাঠি হাতে গাড়ি থেকে নামেন সংসদ সদস্য। এ সময় কয়েকজন কর্মী—সমর্থককে পিটুনি দেন তিনি। তার সঙ্গে থাকা ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা আতিক ও যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারকে ধাক্কা দেন। এতে তারা আহত হন। ওই সময় চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুও সংসদ সদস্যের গাড়ি থেকে নেমে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মেয়র আলমগীর চৌধুরী সংসদ সদস্যকে গাড়িতে তুলে দিলে তিনি বাড়ি ফিরে যান।

তবে খবর ছড়িয়ে পড়ে মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর ওপর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেছে। এ খবরে মেয়র প্রার্থীর বাড়ির এলাকা কাহারিয়াঘোনা থেকে শতাধিক কর্মী—সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে চিংড়ি চত্বর এলাকায় যান। এসময় আলমগীরের কর্মী—সমর্থকেরা জাফর আলম ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিয়াবুল হকের (সংসদ সদস্যের ভাতিজা) বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, সংসদ সদস্য হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে লাঠি হাতে নেতা—কর্মীদের ধাওয়া করেন। তার সঙ্গে থাকা হাসানুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গায়ে হাত তোলেন।

সংসদ সদস্যের এমন আচরণ সম্পর্কে আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘সংসদ সদস্যের ভাতিজা জিয়াবুল হক ২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তা ছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাহেদুল ইসলাম সাংসদের অনুসারী। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও জাহেদুলকে অব্যাহতির খবরে সংসদ সদস্য এমন আচরণ করেছেন। ’

অবরোধ চলাকালে, এমপি জাফরের দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকেরা   “জয়বাংলা শ্লোগান ও জাফর ভাইয়ের কিছু হলে মুহুর্মুহ শ্লোগানে মহাসড়কের একাধিক স্থানে মহাসড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে এবং লাঠিসোটা হাতে নিয়ে সড়কে অবরোধ করে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসি ল্যান্ড মো. তানভীর হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ মহাসড়ক থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সরিয়ে দিতে গেলেও তারা পিছু হটে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করার সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ‘মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার প্রায় ৩৯ কিলোমিটার মহাসড়কের একপ্রান্তের আজিজনগর এবং অপরপ্রান্তের খুটাখালী পর্যন্ত কিছুদূর পর পর অন্তত ২০ পয়েন্টে ব্যারিকেড দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। ’ 

ওসি বলেন, ‘অল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে এমপি জাফর আলম বলেছেন, তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। জেলা আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট নির্ভর রাজনীতি করার জন্য হটকারী ও অন্যায্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর দলের কোন নেতাকর্মী বা সমর্থককে আমার জন্য রাস্তায়ও নামতে বলিনি। যোগ করেন এমপি জাফর।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘন্টা, জুন ১১,২০২১
এসবি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।