ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

খাগড়াছড়িতে ৭ বছরেও শেষ হয়নি শিশুসদনের ভবন নির্মাণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
খাগড়াছড়িতে ৭ বছরেও শেষ হয়নি শিশুসদনের ভবন নির্মাণ

খাগড়াছড়ি: সাত বছর কেটে গেলেও প্রজ্ঞাবংশের শিশুসদনের আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। পিলারের স্তম্ভ আর ছাদ, তারপরেই থেমে গেছে ভবনের নির্মাণ কাজ।

ইতোমধ্যে ছাদের বিভিন্ন অংশে ফাটলও ধরেছে। সেই ফাটল দিয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি।  

আবাসন সংকটে দুর্ভোগের শেষ নেই অনাথ শিশুদের। সীমাহীন কষ্টে কাটছে তাদের জীবন।

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের বুলিপাড়ায় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের পাশেই ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল প্রজ্ঞাবংশ শিশুসদন।

উদ্দেশ্য ছিল- পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনাথ শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নিজ নিজ মাতৃভাষায় এবং ধর্মীয় দেশনায় দীক্ষিত করা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৯৪ জন অনাথ শিশু শিশুসদনটিতে বেড়ে উঠছে। আর শিশুদের ধর্মীয় দেশনা ও পাঠদানসহ যাবতীয় বিষয় দেখাশোনার জন্য অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষসহ নিয়োজিত রয়েছেন ৯ জন ধর্মীয় গুরু।

কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুসদনটির আবাসিক ভবন নির্মাণে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে প্রথম ধাপে ৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে ১০ লাখ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দেয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কথা ছিল পরবর্তীতে তৃতীয় ধাপের বরাদ্দের মাধ্যমে পুরোপুরি শেষ করা হবে ভবনটির নির্মাণ কাজ। তবে গত সাত বছরেও সেই বরাদ্দ আর পাওয়া যায়নি।

শিশুসদনের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণির সাথোং মারমা, দ্বিতীয় শ্রেণির অংকজাই মারমা, চতুর্থ শ্রেণির রাহুল ত্রিপুরা ও ৫ম শ্রেণির থোয়াইচিংনু মারমা জানায়, বিহারের বারান্দায় কিংবা খাবার ঘরে গাদাগাদি করে রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের।

শিশুসদনের সহকারী পরিচালক উপাধ্যক্ষ অগ্রসার ভিক্ষু বলেন, আবাসিক ভবনটি সম্পন্ন করতে না পারায় শিশুদের রাত্রিযাপনে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। যে ঘরে খায়, সে ঘরেই ঘুমাতে হয় তাদের। জায়গা সংকুলান না হওয়াতে অনেকে আবার বারান্দাতেই ঘুমায়। বর্ষা মৌসুমে তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যায়।

শিশুসদনের পরিচালনা কমিটির দফতর সম্পাদক সুইচিংমং মারমা (ইন্দ্রবংশ) বলেন, বছরের পর বছর ধরে অনাথ শিশুরা এভাবেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বরাদ্দের জন্য প্রতিবছরই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়। তবে তাতে কোনো লাভ হয় না।

শিশুসদনটির প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবংশ মহাথের বলেন, ২০০৭ সালে টিনের চালার বেড়ার ঘরে শুরু হয় শিশুসদনটির কার্যক্রম। সময়ের ব্যবধানে এটি এখন একটি আলোকিত ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে কেবলমাত্র আবাসনের অসুবিধার কারণে অনাথ শিশুরা এখানে থাকতে আগ্রহ হারাচ্ছে।

এছাড়া শিশুসদনটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য এবং অনাথ শিশুদের দুর্ভোগ লাঘবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই ধর্মীয় গুরু।

এরআগে ২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর কাছে আবেদন করা হয়। তিনি তখন জানান, পরবর্তী অর্থবছরে শিশুসদনটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য বরাদ্দ দেবেন। অথচ তার মেয়াদে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

এরইমধ্যে ২০২১ সালের শুরুর দিকে পরিষদের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।
তিনি বলেন, শিশুসদনটিতে বরাদ্দ কবে দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর কেউ কোনো আবেদনও করেন নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নের সময় বিষয়টি বিবেচনা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
এডি/এমআরএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।