ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মোবাইল কাড়তে শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
মোবাইল কাড়তে শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরে রতন মোল্লা (৮) নামে এক শিশুকে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এসময় সোহান (৯) নামে আরেক শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (২১) দিবাগত রাত ১২টার দিকে পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের সীমানা এলাকার নির্জন জায়গা থেকে শিশু রতনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  

এ ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান (১৮) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আটক মেহেদী হাসান উপজেলার দ্বিতীয়াখন্ড ইউনিয়নের কাচাই মাতবরের কান্দি গ্রামের বিদ্যুৎ মিয়ার ছেলে। দেড় মাস আগে কদিরপুর ইউনিয়নের তাহের আকনের চরকান্দী গ্রামে নানা আনছু বেপারির বাড়িতে বেড়াতে আসে সে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান নামের ওই যুবক কাদিরপুর ইউনিয়নের চরকান্দি গ্রামে নানা আনসু বেপারির বাড়িতে বেড়াতে আসে প্রায় দেড় মাস আগে। মাঝে মধ্যেই সে পাশের বাড়ির কৃষক জসিম মোল্লার একমাত্র শিশুপুত্র রতন এবং নাসির শিকদারের ছেলে সোহানের সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোনে লুডুসহ গেমস খেলতো।

মঙ্গলবার বিকেলে কাঁঠালবাড়ী এলাকায় রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কথা বলে দুই শিশুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় মেহেদী। সন্ধ্যার দিকে শিশু রতন ও সোহানকে নিয়ে কাঁঠালবাড়ী সংলগ্ন সীমানা ও নাওডোবার মধ্যবর্তী পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর সোহানকে পানি ও চানাচুর আনতে ১শ টাকা দিয়ে দোকানে পাঠায়। সোহান যেতেই মেহেদী রতনকে ওই নির্জন স্থানে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। প্রায় ২০ মিনিট পর সোহান এসে রতন কোথায় জানতে চাইলে, সে বাড়ি চলে গেছে বলে জানায় মেহেদী। পরে সোহানকে নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় যায়। সেখানে সোহানের গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা করে। এসময় সোহানের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে মেহেদী দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। সোহানকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয় স্থানীয়রা।

সোহান বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই সন্ধ্যায় কাদাপানি মাখা অবস্থায় মেহেদী নানা বাড়ি গেলে পরিবারের লোকজন রতন ও সোহানের খোঁজ করে। মেহেদীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে শিবচর থানা পুলিশকে খবর দেয় শিশুদের পরিবার। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাতসহ পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে ঘটনাস্থলে রতনের মরদেহ দেখিয়ে দেয়। মধ্যরাতে মরদেহ উদ্ধার করে শিবচর থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

নিহত রতনের মা জরিনা বেগম বলেন, বিকেলে ৫টার দিকে দেখলাম রতন ও সোহান আমাদের বাড়ির পাশে নাচতেছে আর মেহেদী সোহানের মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছে। এসময় আমি ওখানে গেলে ওরা ওখান থেকে চলে যায়। এরপরে আমি বাড়ির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। পরে ওদের কারো খোঁজ পাইনি। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আমরা রতন ও সোহানকে না পেয়ে দুই পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পরে জানতে পারি আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কুতুবপুরে এক শিশু নিখোঁজের খবর পাই। এবং শিশু সোহানকে নিয়ে তার পরিবার আমাদের কাছে আসে। সোহানের দেওয়া তথ্যমতে আমরা মেহেদীকে আটক করি। পরে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে রতনের মরদেহ উদ্ধার করি। ধারণা করা হচ্ছে শিশুটির মোবাইল ছিনিয়ে নিতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।