চাঁদপুর: মায়ের পরকীয়া প্রেমিক আবদুল হান্নান তার সহযোগীদের নিয়ে চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে নওরোজ আফরিন প্রিয়াকে (২১) হত্যা করেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন প্রিয়ার মা তাহমিনা সুলতানা রুমি।
প্রিয়া শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের আহাম্মদ নগর ছোটপোদ্দারর বাড়ির সৌদি আরব প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের একমাত্র মেয়ে। তার শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লায়। স্বামী হৃদয় চৌধুরী কুমিল্লায় চাকরি করেন। অহনা (২) নামের তাদের এক মেয়ে আছে।
শাহরাস্তি থানার পুলিশ জানায়, তাহমিনা সুলতানা রুমি ও তার প্রেমিক দেবকরা গ্রামের আবদুল হান্নান (৩১) মিলে প্রিয়াকে খুন করেন। ৫-৬ বছর আগে মামলার বাদী প্রিয়ার মা তাহমিনা সুলতানা রুমি ও আবদুল হান্নানের পরকীয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে হান্নান সৌদি আরব চলে যান। ঘটনার ১ মাস আগে তিনি দেশে আসেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, মামলা তদন্তকালে স্থানীয় উপস্থিত সাক্ষী ও বাদী তাহমিনা সুলতানা রুমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাদীর কথায় সন্দেহ হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
একপর্যায় রুমি জানান, তার বাড়ির পাশের আবদুল হান্নানের সঙ্গে তার প্রায় পাঁচ-ছয় বছর থেকে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। এই সম্পর্কে প্রায়ই বাধা দেন তার মেয়ে নওরোজ আফরিন প্রিয়া। এভাবে তিনি এই সম্পর্কে বাধা সৃষ্টি করেন। তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রুমি ও হান্নান।
তাহমিনা সুলতানা রুমি আরও জানান, ঘটনার দিন ১৬ সেপ্টেম্বর মেয়ে নওরোজ আফরিন প্রিয়া ও নাতনি অহনাকে নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি থেকে শাহরাস্তি ঠাকুর বাজারে ডাক্তার দেখাতে যান রুমি। বাড়িতে ছিলেন একমাত্র ছেলে দিয়া হোসেন পরশ (১৯)। তারা বাড়িতে ফিরে আসেন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। তখন পরশ খিলা বাজারে চলে যান।
ওই সময় আবদুল হান্নান তাদের বাড়িতে আসেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে মেয়ে ও নাতনিকে রেখে রুটি তৈরির কথা বলে পাশের বাড়িতে চলে যান রুমি। তখন আসামি হান্নানের দুই সহযোগী গোপনে ঘরে প্রবেশ করেন। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রিয়ার গলার ও মাথার পেছনের ডান চোয়াল এবং পিঠে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
পুলিশের দাবি, মামলার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত ও মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী তাহমিনা সুলতানা রুমি ও তার প্রেমিক হান্নানকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদের আদালতে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে আসামি তাহমিনা সুলতানা রুমির জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম জানান, ঘটনায় জড়িত মামলার বাদী রুমি ও তার প্রেমিক আবদুল হান্নানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শাহরাস্তি মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, তাহমিনা সুলতানা রুমি ও তার প্রেমিক আবদুল হান্নান মিলে প্রিয়াকে খুন করেন। মায়ের পরকীয়া জেনে ফেলায় দুজনে পরিকল্পনা করে প্রিয়াকে তাদের পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:
শাহরাস্তিতে গৃহবধূকে নিজ ঘরে কুপিয়ে হত্যা
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
জেএইচটি