সিলেট: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব সার্বজনীন শারদীয় দূর্গোৎসব। শাস্ত্রমতে, এবার বর্তলোকে ঘোটকে চড়ে এসেছিলেন দেবী।
শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে নিশ্চিত্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শারদীয় দূর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয় নগরের ক্বীন ব্রিজ সংলগ্ন সুরমার তীরে। বিসর্জন অনুষ্ঠান দেখতে প্রতিবছরই প্রচুর সংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। তবে এবার মানুষের ভিড় ছিল তুলনামূলক কম।
বিজিবিসহ নিরাপত্তাবাহিনীর কড়াকড়ি ছিল নগরময়। বিভিন্ন পূজা মন্ডপের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়। নগরজুড়ে টহলে ছিল বিজিবির সদস্যরা। প্রতিমা বিসর্জনের এলাকায় পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়।
এর আগে সকালে প্রতি মণ্ডপে দশমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন নারীরা। এরপরই মণ্ডপগুলোতে বাজতে শুরু করে বিষাদের সুর।
এ দিন বিকেলে নগরের চাঁদনীঘাটে স্থাপিত সুবোধ মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসময় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন উপস্থিত হয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
বিসর্জন অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আধ্যাধিক নগরী সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দীর্ঘ কালের ঐতিহ্য। সিলেটের নাগরিকরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যের উৎসবে একাত্ব হয়ে অংশ নেওয়ায় আমাদের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে। অতিতেও বিভিন্ন সময়ে ও সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সিলেটের মানুষ। ভবিষ্যতেও আমাদের এই সম্প্রীতির বন্ধনকে অটুট রেখে সিলেটকে একটি শান্তি ও সম্প্রীতির মডেল নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর সর্বাধিক গুরুত্বআরোপ করেন। বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময়েই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব অত্যান্ত স্পষ্ট।
পূজা উদযাপন পরিষদের মহানগর শাখার সভাপতি সুব্রত দেব’র সভাপতিত্বে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ এবং মহানগর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত’র যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ।
বক্তব্য রাখেন- পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযুদ্ধা অ্যাডভোকেট গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ চয়ন, ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ড. হিমান্দ্রী শেখর রায়, পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, ঐক্য পরিষদ জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃপেশ পাল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক প্রদী দেব, পূজা পরিষদ মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এপ্রেক্স সিয়ান চন্দন দাস, অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন, মনোজ দত্ত মুন্না, ঐক্য পরিষদ জালালাবাদ থানার সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেব, মলয় পুরকায়স্থ, অ্যাডভোকেট বিজয় দেব বুলু, অ্যাডভোকেট পংকজ দাস প্রমুখ।
এদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে নগরী কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ছিল। এদিন জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা নগরে মিছিল বের করলেও কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়নি প্রশাসন।
এ দিন বিকেলে নগরের লামাবাজার বিশৃঙ্খলার চেষ্টাকালে একজন আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেন কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। এছাড়া নগরের সার্বিক পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২১
এনইউ/কেএআর