ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭ বছর শিকলে বাঁধা খুলনার মিজান

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
৭ বছর শিকলে বাঁধা খুলনার মিজান মিজান

খুলনা: পৌষের কনকনে শীতের মধ্যেও ধুলোবালিমাখা পোশাকে পায়ে লোহার শিকল। মায়াভরা দুটি চোখ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে থাকে।

মাঝে মধ্যে আপন মনে কথা বলে। কিন্তু তার সে কথাগুলো কেউ বোঝে না!

খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট কাঁচাবাজরের টিনসেটের ভগ্ন একটি খোলা কক্ষে মানসিক ভারসাম্যহীন মিজানুর রহমান মিজানের (২৮) জীবন কাটছে এভাবেই। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে এ যুবককে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। একটি চৌকিতেই খাওয়া, দাওয়া, ঘুম, মলমূত্র ত্যাগ সবাই করতে হয়। এভাবেই প্রায় সাত বছর ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে তার। সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিত্তশালী ও সরকারি সহায়তার দাবি মিজানের দরিদ্র বোনদের।

মিজানের বাবা বরিশালের মৃত মজিদ সরদার। মাও বেঁচে নেই। দুই বোন আছে শুধু। মিজানের রুবি বেগম ও নাজমা বেগম কাঁচাবাজারের পাশেই থাকেন। তারাই মিজানের দেখাশোনা করেন।

নাজমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ৭-৮ বছর আগে সুস্থই ছিল। হঠ্যাৎ একদিন মাকে এসে মার ধোর করল। আমাদের দা দিয়ে কোপাল। আমার মা অন্ধ ছিলেন। তখন মা-বাবা দুজনই জীবিত ছিলেন। পরে তারা মারা গেলেন। এরে আর ভালো করা গেল না। অনেক কষ্ট করে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালে দিয়ে আসি। ওষুধ খায়ানোর পর ভালো হয়ে গেছে। পরে আবার যা তাই। আবার সেই পাগলামী। ঘরে প্রসাব করে। খাবার নষ্ট করে। আমাদের মারধোর করে। ছোট বাচ্চা রয়েছে তাই ভয় লাগে। এ কারণে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। মাসে একবার লোকজন নিয়ে হাত পা বেঁধে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে দেই। নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারলে মিজান সুস্থ হয়ে যাবে। তবে আমরা গরীব মানুষ হওয়ায় টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।

তিনি জানান, সরকারি হাটের জায়গায় থাকি তাই খরচ লাগে না। তবে কোরবানীর পশুর হাটের সময় সরে যেতে হয়।

মিজানের বড় বোন রুবি বেগমের মেয়ে কলেজ ছাত্রী সাদিয়া বলেন, মামা সরকারি কোনো ভাতা পান না। কয়েকবার কমিশনারের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। আমার মা লোন নিয়ে মামাকে পাবনা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। যে কারণে মামার চিকিৎসা করাতে পারছি না। মামাকে বেঁধে না রাখলে সবাইকে মারধোর করে।

প্রতিবেশি শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মিজান আগে সুস্থ ছিলেন। উনি এখন অনেক অসুস্থ হওয়ায় তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। উনার যখন ওষুধ ও চিকিৎসা করা হলে অটমেটিকভাবে সুস্থ হয়ে যাবেন। আমি তাকে আগে দেখেছি তখন সুস্থ ছিলেন। টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না। যার কারণে সমস্যাটা আবার হয়েছে।

আন নাফি কল্যাণের পথের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোহাম্মদ এম এ সাদী বাংলানিউজকে বলেন,বছরের পর বছর শিকলে বাঁধা খুলনার জোড়াগেটের মিজান। সম্প্রতি তার বিষয়ে আমরা জানতে পারি। আমাদের টিমের সদস্যরা তাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। তাকে কাপড় ও কম্বল পরিয়ে দেওয়া হয়। আমরা মনে করি মিজানের সঠিক চিকিৎসা হলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।  

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামামন মিয়া স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, মিজানের বোনদের মনে হয় বলা হয়েছে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে গিয়ে কাগজ পত্র মজা দিলে সেরকারি প্রতিবন্ধী কার্ড দেবে। এরপর থেকে মিজান ভাতার আওতায় চলে আসবে। মিজানের পরিবার যোগাযোগ করলে ভাতা পেয়ে যাবে অসুবিধা নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এমআরএম/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।