ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ডিসি সম্মেলন

ভয়-লোভের ঊর্ধ্বে থাকুন, ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
ভয়-লোভের ঊর্ধ্বে থাকুন, ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: ভয়-ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করতে জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি তিনি জেলা প্রশাসকদের আরও ২৪টি নির্দেশনা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন ২০২২’- এর উদ্বোধনকালে এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে অংশ নেন তিনি।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে আপনাদের সব ধরনের ভয়-ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আইনানুগ দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে আপনাদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। দেশ অব্যাহতভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে’।

সরকারি সেবা নিতে এসে সাধারণ জনগণ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে মাঠ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি সেবা নিতে এসে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি শিকার না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে’।

‘এখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথাটাও মনে রাখতে হবে সেই কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে অর্থ উপার্জন করে সেটা দিয়েই তো বেতন-ভাতা, আমাদের সবকিছু চলে। কাজেই তাদের সম্মান করতে হবে’।  

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামুখী জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সিটিজেনস চার্টার ইত্যাদির বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে’।

‘সুশাসন সংহতকরণের উদ্দেশ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকরা আরও আন্তরিকভাবে কাজ করবেন বলে আশা করি’।

সরকারের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে কিনা, মান সম্মত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি ও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতা ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে’।

নিজেদের জনগণের খাদেম হিসেবে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নিজেকে জনগণের খাদেম হিসেবে অর্থাৎ সেবক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমিও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে জনগণের একজন সেবক মনে করি’।

‘ক্ষমতায় আসা, প্রধানমন্ত্রী হওয়া মানে জনগণের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাওয়া এবং যেই লক্ষ্য স্থির করেছি সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন’।

করোনা ভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশনাসমূহ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন, বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার, নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা; নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ; বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং,খাদ্যে ভেজাল,নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ রোধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা; বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধে যেসব অঞ্চেলে গণহত্যার শিকার সেই পরিবারদের বর্তমান অবস্থা জানা এবং তাদের যথাযথ সম্মানজনক জীবন যাত্রার ব্যবস্থা করা; গণ কবর সংরক্ষণ এবং যেই সব যুদ্ধক্ষেত্রগুলো সেগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া এবং ইতিহাসগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার নির্দেশনা দেন সরকার প্রধান।

এছাড়া গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা; নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়াসহ মোট ২৪টি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই ডিসি সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

সম্মেলনে বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, জেলা প্রশাসকদের পক্ষে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান।

জনগণ যেন হয়রানির শিকার না হয়

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
এমইউএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।