ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪ নম্বর রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য পদ প্রার্থীর ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভোট পরবর্তী সহিংসতায় মামলা করা হয়েছে।  

৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে তাতে।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে তেমন মানুষজন নেই। ঘর বাড়িতে শুধু রয়েছেন নারী ও শিশুরা। এলাকার পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের ভয়ে। বাড়িতে নারী আর শিশুরা অজানা আতঙ্কে সময় পার করছেন।  

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসাননগর কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে সদস্য পদে মাসুদ রানা তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহ আলমের চেয়ে ১০২ ভোট বেশি পান। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করেন শাহ আলমের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে তারা একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ও কেন্দ্রে হামলা চালান। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে। তাতেও কাজ না হলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে হামিদুর রহমান (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। আহত হন আবু কালাম (৩২) নামে আরেক ব্যক্তি।

আসাননগর গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা বলেন, ভোটের দিন মারামারির ঘটনায় আমার বাবাসহ গ্রামের অনেক মানুষের নামে মামলা হয়েছে। ফলে গ্রামে আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই। শুধু মসজিদের ইমাম, মোযাজ্জিন ছাড়া গ্রামের সব পুরুষ আত্মগোপনে গেছেন। বর্তমানে আমরা সবাই আতঙ্কে আছি।

একই গ্রামের মরিয়ম বেগম বলেন, মারামারির সময় আমার স্বামী বাড়িতেই ছিল না। তারপরও আমার স্বামীর নামে মামলা হয়েছে। আজ দুই মাস ধরে আমার স্বামী বাড়িতে নাই। ঘরে খাবার নাই, ১০ মাসের ছেলেটাকে ঠিক মতো খাবার দিতে পারি না। অন্যের বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছি।

স্কুল শিক্ষার্থী তৃষা বলে, আমার বাবা একজন দিনমুজুর। সারাদিন মাঠে কাজ করে রাতে বাড়িতে আসেন। আমার নির্দোষ বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা তিন বোন পুলিশের পা ধরে বলেছি যে আমার বাবা নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ধাক্কায় ফেলে দেয়। বাবা একদিন কাজ না করলে আমাদের চুলায় আগুন জ্বলে না। আজ ১১ দিন খুব কষ্টে আছি।

রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শহিদুর রহমান বলেন, রাজাগাঁও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সরকারি কাজে বাধা, প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পুলিশের ওপর লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করার অভিযোগে প্রিজাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ ৪৫০ জনের নামে মামলা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
এসআই