ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

কম বয়সী মেয়েদের ভালো বর: ধারণায় বিয়ের চাপ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
কম বয়সী মেয়েদের ভালো বর: ধারণায় বিয়ের চাপ

ঢাকা: আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

এ দিবসটিকে সামনে রেখে শনিবার (৫ মার্চ) আঁচল ফাউন্ডেশন নারীদের নিয়ে একটি জরিপের আয়োজন করেছে।

এই জরিপে অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ১৪ জন শিক্ষিত তরুণীদের থেকে তারা কতটা বৈষম্য, লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানি, সমাজ ও পরিবারে প্রতিবন্ধকতা, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছেন ও এসব বিষয় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে সমন্বয়কৃত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

জরিপে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণী। অংশগ্রহণকারী তরুণীদের ভেতর অবিবাহিত ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ও বিবাহিত ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বাকিরা আর সংসার করছেন না।

আঁচল ফাউন্ডেশন ‘তরুণীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক সমীক্ষা নিয়ে শনিবার ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল তুলে ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক. ড. কাবেরী গায়েন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন মোল্লা, সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মিডিয়া কমিউনিকেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ অংশ নেন।

মানসিক সমস্যার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী পারিবারিক টানাপড়েন

সমীক্ষার ফলাফল থেকে প্রথমেই জানা যায় যে, পারিবারিক টানাপোড়েন তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সর্বাধিক প্রভাব ফেলে যা ৩১.৮৫ শতাংশ। আর্থিক অস্বচ্ছলতা অংশগ্রহণকারীদের ২৪.৪৬ শতাংশের মনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। বেকারত্বের কারণে ১৪.৭৯ শতাংশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ততার শিকার হন। ১৪.৪০ শতাংশ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার মাধ্যমে ও ২.৩৭ শতাংশ তরুণী যৌন নিপীড়নের কারণে মানসিকভাবে প্রভাবিত হন।

পারিবারিক টানাপোড়েনের পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছলতা ৩০.৭২ শতাংশ তরুণীদের মনে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাবা মা বা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ২৭.৩২ শতাংশের মনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। সেসঙ্গে পরিবার থেকে অযাচিত চাপের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ততার শিকার হয়েছেন ২৩.৯২ শতাংশ নারী।

বাড়ছে বিয়ের জন্য অযাচিত চাপ

জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণীদের মধ্য থেকে ২৩.৭৭ শতাংশ তরুণী নিজেদের অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও পরিবার থেকে বিয়ের চাপের সম্মুখীন হন। যারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের মধ্যে ১০৯ জনের পরিবার পরবর্তীতে বিয়ে না হওয়ার ভয় থেকে এমন চাপের সৃষ্টি করেন বলে জানা যায়। কমবয়সী মেয়েদের ভালো বর হয়- এরূপ ধারণার কারণে ৮৬ জনের ওপর পারিবারিকভাবে বিয়ের চাপ আসে। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ৮৫ জনকে বিয়ের চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় যে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ধারণা প্রসূত কারণে নারীদের ওপর কর্তৃত্ব আরোপের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বডি শেমিং করায় এগিয়ে আত্মীয়রা

পরিসংখ্যানের তথ্য ও উপাত্ত অনুযায়ী, ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে, ৩৭.২৪ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন তাদের শরীরের আকৃতি ,গঠন এবং অবয়ব নিয়ে তাদের আত্মীয়রাই কথায় ও ইঙ্গিতে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। বন্ধুবান্ধবের কাছে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২ শতাংশ। এমনকি পরিবার থেকে এ ধরণের মন্তব্য শুনেছেন বলে জানিয়েছেন ১৪.২৫ শতাংশ। পথচারীর মাধ্যমে শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে ১১.৮৫ শতাংশ তরুণীর। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন হলে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং হীনমন্যতা কাজ করে। পরবর্তীতে যেটা আত্মহত্যার পেছনে অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রাখে।

কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষণায় এসেছে ওজনের কারণে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হতে হয় বলে ৩৯.৪৯ শতাংশ তরুণী মনে করেন। গায়ের রঙের কারণেও ৩৬.৯৫ শতাংশ তরুণী এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। এছাড়াও উচ্চতা, মুখাবয়বের গঠন ও দাগ, কণ্ঠস্বর প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তরুণীরা বিরূপ মন্তব্য শুনে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

যৌন হয়রানির শিকার ৬৫.৫৮ শতাংশ তরুণী

সমীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে, ৬৫.৫৮ শতাংশ তরুণী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫.৪৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন যে তারা বিকৃত যৌন ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বা কুদৃষ্টির মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। ২৯.৬২ শতাংশ তরুণীকে আপত্তিকর স্পর্শের ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। আর বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২.২৬ শতাংশ।

নারীরা বাসে বেশি অনিরাপদ

দেশের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও বিভিন্ন প্রয়োজনে নারীরা গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকেন। সমীক্ষা বলছে, ৪৫.২৭ শতাংশ তরুণী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন। গণপরিবহন হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত বাস বা বাসস্ট্যান্ডে যৌন হয়রানির মতো অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হন ৮৪.১০ শতাংশ তরুণী। এছাড়াও রেল বা রেলস্টেশনে ৪.৫৮ শতাংশ এবং রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ১.৫৩ শতাংশ তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হন।

বাইরে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার বেশি হন

গণপরিবহনে যৌন হয়রানির মধ্যে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ তরুণী। ২০.০৪ শতাংশ কুদৃষ্টি এবং অনুসরণের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, তরুণীরা সবচেয়ে বেশি এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হন একাকী চলার সময়ে যা ৭৫.৬০ শতাংশ। তবে ২১.৫৭ শতাংশ মা, বোন, বান্ধবী বা অন্য নারী সঙ্গী থাকা অবস্থায় এবং ২.৮৩ শতাংশ বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষ সঙ্গী থাকা অবস্থায় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে সমীক্ষায় উঠে আসে। লক্ষণীয় যে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের কেউ সঙ্গে থাকার পরও নারীদেরকে অযাচিত হয়রানির মুখোমুখী হতে হয়।

শৈশবেও রেহাই পায়নি নারী

সমন্বয়কৃত তথ্যানুসারে, ৩৮.৮৬ শতাংশ তরুণী শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। তার মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের দ্বারা ৩৫.২৮ শতাংশ যৌন নিগ্রহমূলক আচরণের শিকার হন। শৈশবে অপরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা ভুক্তভোগী হন ২৮.১৭ শতাংশ। এছাড়াও ১৬.৫০ শতাংশ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এহেন হীন আচরণের শিকার হন। শৈশবের এরূপ ঘটনা ২৮.৪৩ শতাংশের মনে সবার প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয় এবং ২৮.১৭ শতাংশের ভেতর পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাবের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ১৫.৭৪ শতাংশ একা থাকতে ভয় পান। এছাড়া অনেকেই পরবর্তীতে বিয়ে করতে বা শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে ভয় পান বলে জানিয়েছেন। শৈশবের যৌন নির্যাতনের কারণে একজন নারীকে সারা জীবন ট্রমার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এর ফলে নারীরা সর্বদাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ততায় ভুগেন।

সংবেদনশীল ছবি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়

তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা যায়, ৪৩.৮৯ শতাংশ তরুণী অনলাইনে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অবান্তর ও কুরুচিপূর্ণ মেসেজ পাঠিয়ে এবং মন্তব্য করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছে ৬১.১২ শতাংশকে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন ১০.৩৪ শতাংশ। ৯.৮৯ শতাংশ ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি নিয়ে দূর্ভোগ পোহান বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও অযাচিত আইডি স্টকিংয়ের শিকার হন ৫.১৭ শতাংশ।

মতামত মূল্যহীন পরিবারেও

একজন তরুণী পরিবার ও সমাজে পুরুষের মতই সমান গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু ২২.২৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন তাদের মতামতকে পরিবারে মূল্যায়ন করা হয় না। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণ মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয় ৪৬.২৫ শতাংশকে। সমীক্ষা বলছে, নারীদের প্রতি প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকেই। এজন্য পরিবারকেই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে হবে নারীদের ন্যায্য অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে।

নারীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, একুশ শতাব্দীতে এসে নারীরা যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন তখনও আমাদের দেশের নারীদের নানাবিধ কারণে থমকে দাঁড়াতে হয়। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবার প্রতিষ্ঠিত নারীদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনো যথাযথভাবে প্রস্তুত নয়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদেরকে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট নারীদের মানসিক বিপর্যস্ততার পিছনে অনেকাংশেই দায়ী জানিয়ে ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেন, দেশের সব নাগরিককে নারীদের প্রতি সঠিক মনোভাব ধারণ করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এই শিক্ষার শুরু হতে হবে শৈশব থেকে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন নারীরা তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, সমাজের একটি অংশ হিসেবে নারীদের যতটুকু সম্মান বা মর্যাদা পাওয়া উচিত সেটা আধুনিক সময়ে এসেও আমাদের সমাজে এখনো নেই। ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি স্তরের নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে এখন যারা বড় বড় অবস্থানে আছেন তাদের উচিত এ বিষয়ে অনুজদের যথাযথ জ্ঞান দেওয়া। সমাজের প্রতিটি শিক্ষিত মানুষকে বুঝতে হবে যে সমাজকে ছেলেমেয়ে সবার জন্য সমানভাবে নিরাপদ জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যেনো মেয়েরা একা বের হতে ভয় না পায়।

নারীদের এই আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিষয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা বলেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট তথা ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি আস্থার প্রতীক হলেও সামাজিক অশুভ প্রয়োগ ও ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার দরুণ অনেক নারীর কাছে তা এক আতংকের নাম। আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে সাইবার জগতকে নারীদের জন্য নিরাপদ রাখা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বিধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান, ব্যক্তিগত সচেতনতা ও পারিবারিক শিক্ষাই পারে সাইবার দুনিয়াকে সুরক্ষিত রাখতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন উল্লেখ করেন, নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে, সচেতনতার পাশাপাশি তাদের পর্যাপ্ত মানসিক সমর্থন করতে হবে এবং বুঝাতে হবে যে জীবন এতো মূল্যহীন নয়। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এর পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেসঙ্গে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সবাইকে সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট লিড মো. রিফাত হাসান তরফদার বলেন, নারীর অধিকার নিয়ে আমরা আজ কথা বলতে শুরু করেছি কিন্তু এই নারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারছি আমরা? রাস্তায়, গণপরিবহনে, এমনকি উন্মুক্ত স্থানেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে অহরহ। পরিবারের মধ্যে নিরাপদ নয় নারী। নারীদের বিচরণের প্রতিটি মাধ্যম হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরাপদ। তবেই আমরা নারী জাগরণ, নারী মুক্তি নিয়ে কথা বলতে পারবো। তা নাহলে এই ব্যর্থতা,আমাদের পরিবারের, আমাদের সমাজের, আমাদের সবার।

নারীর সামাজিক ও মানসিক সুরক্ষায় আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা

তরুণীদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিতে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নারীর বিচরণক্ষেত্রে তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্ব স্ব বিচরণক্ষেত্রগুলোকে আইনী বাধ্যবাধকতার আওতায় নিয়ে আসা।

গণপরিবহন (বাস, রেল, রাইড শেয়ারিং) ও তার স্টপেজগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন; ইভটিজিং ও যৌন হেনস্তার মতো ঘটনাগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর ভূমিকা রাখা; শৈশবকালীন যৌন হেনস্তা, বডি শেমিং থেকে রক্ষা করতে পরিবারগুলোকে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া; নারীর প্রতি বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা জোরদার করা; নারীর সুরক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর মনিটরিং জোরদার করা; সব যানবাহন ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা যেন যেকোনো সময়ে যাত্রী তার অবস্থান অন্যদের জানানোর মাধ্যমে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে; এবং নারী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মরক্ষামূলক ট্রেনিং দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।