ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দীর্ঘ যানজট, দুর্ভোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দীর্ঘ যানজট, দুর্ভোগ

রাজবাড়ী: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ২১ জেলার যোগাযোগোর একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট এটি।

 

এ নদীপথ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পারাপার হয়। তবে বর্তমানে নাব্যতা সংকটের কারণে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া প্রান্তে নদী পারাপার হওয়া ছাট-বড় গাড়ির যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের।  

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে রাজবাড়ী, ফরিদপুর,মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহ, যশোহর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ অত্র অঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী সাধারণ পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পাটুরিয়া ঘাট প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। পাটুরিয়া ঘাটে ৭ কিলোমিটারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাকের সিরিয়াল রয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য যে সব বাসের যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাটে এসেছে, সেগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির অপেক্ষায় বসে আছে। ফলে যানজট আর গরমে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও শিশুরা।

ঢাকা থেকে কুমারখালীগামী রাবেয়া পরিবহনের যাত্রী সৈয়দ শাহ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাবতলী থেকে বাসে রওনা দিয়েছি। বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে এসে পৌঁছে যানজটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।

কুষ্টিয়াগামী যাত্রী সোহেল মাহমুদ বলেন, পাটুরিয়া ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির আশায় বসে থেকে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছি।

ঢাকা থেকে রাজবাড়ীর সোনাপুরগামী যাত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ঢাকায় ছেলের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আজ রাজবাড়ীতে ফিরছি। পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানজটের কারণে আর গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে।  

অন্যদিকে, এই মহাসড়কের দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়কে শত শত পণ্যবাহী ট্রাকের সারি তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দৌলতদিয়া প্রান্তের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফিডমিল পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার ও গোয়ালন্দ মোড়ের রাজবাড়ী জুট মিল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের সারি দেখা যাচ্ছে। এ সময় সড়কের খোলা আকাশের নিচে তীব্র গরমে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চালক ও হেলপাররা।

ঘাট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ নৌরুটে ছোট-বড় ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। তবে দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরিঘাটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ঘাট আগেই বন্ধ ছিল। নতুন করে নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ৬ নম্বর ঘাটটিও বন্ধ। বর্তমানে ৩, ৪, ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এর মধ্যে আবার দু’একটি ঘাট বিভিন্ন কারণে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বর্তমানে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ফেরিঘাটের পকেট পথগুলো নিচু হয়ে গেছে। ফলে যানবাহন লোড-আনলোডে সময় বেশি লাগছে।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা বাসের সুপারভাইজার আব্দুল আলী জানান, সকালে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় সিরিয়ালে এসে আটকা পড়েছেন। ফেরি পেতে কমপক্ষে দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ সময় প্রচণ্ড গরমে বাসের যাত্রীদের অনেক কষ্ট হচ্ছ। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ট্রাকচালক রফিকুল হাসান, সোহেল মিয়া, আলাল শফিকসহ কয়েকজন জানান, দু’দিন আগে এসে তারা গোয়ালন্দ মোড়ে সিরিয়ালে আটকে আছেন। তীব্র গরমে খোলা আকাশের নিচে থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এখানে খাবার, গোসল ও টয়লেটের কোনো সুব্যবস্থা নেই।

তারা আরও জানান, এখান থেকে ঘাট এখনো প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে। কবে, কখন ফেরি পাবেন তা বলতে পারছেন না। এভাবে প্রায় সারা বছরই তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল জানান, ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস পার করা হচ্ছে। আসা করি রাতের মধ্যে ঘাট এলাকা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বাংলানিউজকে বলেন, এ নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করছে। তবে নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় ফেরিতে লোড-আনলোডে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এছাড়া কয়েকদিন ধরে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সিরিয়াল তৈরি হয়েছে। তবে যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।