ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীর বাতাসে যেন আগুনের হলকা!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
রাজশাহীর বাতাসে যেন আগুনের হলকা!

রাজশাহী: অগ্নিদহনে পুড়ছে পদ্মাপাড়ের সবুজ রাজশাহী। বাতাসে যেন আগুনের হলকা।

চৈত্রের এই খরতাপেই তেঁতে উঠেছে পথঘাট। বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দুর্বিষহ গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের বোরো ধান।

ওষ্ঠাগত গরমে হাঁসফাঁস করতে শুরু করেছে মানুষ। মৌসুমের প্রথম তাপদাহেই হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। মরু অঞ্চলের মতো যেন লু হাওয়া বইছে এখানে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপমাত্রা। সেইসঙ্গে তীব্র হচ্ছে পানির সংকট।

মধ্য চৈত্রের অস্বস্তিকর এই খরায় শহর ও গ্রামের দিনমজুর, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রাণবায়ু যেন যায় যায় অবস্থা। আর এই দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ। আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ ভাসলেও বৃষ্টির দেখা নেই!

ঘরে বাইরে কোথাওই নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা; ওপর থেকে যেন আগুনই নামছে! ওষ্ঠাগত গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে। একদিকে তাপদাহ আরেক দিকে গরম বাতাস। দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়কগুলো এমনিতেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। এক পশলা বৃষ্টির জন্য সবাই যেন চাতক পাখির মতো আকাশের নীল দিকে চেয়ে রয়েছে।

রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখে দেখা যায়। কিন্তু এবার শীত কম পড়ায় এই অঞ্চলে গরম এসেছে আগেই! এ সময় সাধারণত ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থাকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতি যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বেরো ধান চাষের সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর মুকুল।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, রাজশাহীর ওপর দিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহ থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ চলছিল। কিন্তু আজ শনিবার তা মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। রাজশাহীতে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর আগে গত ১৯ মার্চ ছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সাধারণত দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু তাপদাহ। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে মৃদু তাপপ্রবাহ রাজশাহীতে আজ মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

রাজশাহীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মূলত গত ১৬ মার্চ থেকে রাজশাহীতে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওই দিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর গত ১৯ মার্চ রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর তাপমাত্রা সামান্য কমলেও তা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ওঠানামা করছিল।

জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাজিব খান বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার বেলা তিনটায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রাজশাহী সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার (২৩ মার্চ) ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ আজ মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে বলে জানান রাজশাহীর ওই আবহাওয়া কর্মকর্তা।

এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, এর আগে ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি। ১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এতে নেই উত্তরে থাকা রাজশাহী বিভাগ। আর বৃষ্টি ছাড়া এই মাঝারি তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শনিবার সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।