শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পুলিশ ও প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় ইতালী প্রবাসী চাঁন মিয়া হাওলাদারের (৪০) মৃত্যুর অভিযোগে উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেনসহ ১০ জনের নামে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে মৃত চাঁন মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার জানান, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) শরীয়তপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের পন্ডিতসার দক্ষিণপাড়া জালুয়াহাটি গ্রামের মৃত ফজল হক হাওলাদারের ছেলে চাঁন মিয়া হাওলাদার ইতালি থাকতেন। গত ২৯ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে আসেন। পার্শ্ববর্তী ভূমখাড়া ইউনিয়নের নলতা গ্রামের রুবেল সরদার (৩০) ও নিতিরা গ্রামের তুহিন পেদাও (৩২) ইতালিতে একই এলাকায় থাকতেন। ইতালিতে চাঁন মিয়ার সঙ্গে তাদের ঝগড়া হয়। তারাও সম্প্রতি দেশে আসেন। সেই ঝগড়ার জেরে গত ১৬ মার্চ দুপুরে নড়িয়া বাজারে গেলে একা পেয়ে রুবেল ও তুহিন মিলে চাঁন মিয়াকে মারধর করেন। এ ঘটনার জেরে ২১ মার্চ বিকালে স্থানীয় ঘড়িসার বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর চাঁন মিয়ার নামে রুবেলের স্ত্রী লিজা আক্তার বাদী হয়ে নড়িয়া থানায় একটি অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ দুপুরে নড়িয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন ও কনস্টেবল নাজিম উদ্দীন চাঁন মিয়ার বাড়িতে তদন্তে যান। পুলিশ দরজায় লাথি মেরে ঘর থেকে বের হতে বললে বের হন চাঁন মিয়া। এরপর এসআই ইকবাল, কনস্টেবল নাজিম ও রুবেল, তুহিনসহ ১০-১২ জন তাকে মারধর করে। তখন চাঁন মিয়া দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন পন্ডিতসার দক্ষিণপাড়া জালুয়াহাটি এলাকার নাজমুলের বাড়ির পুকুরপাড়ে পড়ে যান চাঁন মিয়া। এরপর তাকে আবারও মারধর করে। তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নড়িয়ার ঘড়িষার আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় বুধবার (৩০ মার্চ) চান মিয়ার ভাই কালু হাওলাদার বাদী হয়ে নড়িয়া থানার উপ-পরিদর্শক ইকবাল হোসেন ও কনস্টেবল নাজিম উদ্দিনকে বাদ দিয়ে ছয়জনকে আসামি করে নড়িয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। অপরদিকে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) শরীয়তপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁন মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন।
এ ব্যাপারে পারুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ ও রুবেল, তুহিন আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। আমি থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ মামলা নেয়নি। তাই এসআই ইকবাল হোসেন, কনস্টেবল নাজিম উদ্দিন ও রুবেল, তুহিনসহ নাম উল্লেখ করে ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আদালতে মামলা করি। আমি স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মুরাদ হোসেন মুন্সী বলেন, পুলিশ ও প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় নিহত চাঁন মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আল ইমরান চাঁন মিয়ার মৃত্যুর ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা চার কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার নড়িয়া থানার এসআই ইকবাল হোসেন বলেন, থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা তদন্তে যাই। এটাই স্বাভাবিক। আমরা চাঁন মিয়ার বাড়িতে তদন্তে গেলে তিনি পালিয়ে যায়। আমরা তাকে মারধর ও ধাওয়া কোনোটিই করিনি। এ অভিযোগ মিথ্যা।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আবীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চাঁন মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় তার ভাই কালু বাদী হয়ে থানায় আগে একটি মামলা করেছেন। পরে শুনলাম তার (চাঁন মিয়া) স্ত্রী (পারুল) বাদী হয়ে দুই পুলিশসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো কাগজপত্র হাতে পাইনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
এনটি