ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাল টাকা তৈরি, টার্গেট ছিল ঈদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
জাল টাকা তৈরি, টার্গেট ছিল ঈদ

ঢাকা: রাজধানীর লালবাগ, নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মূল্যের বাংলাদেশি জাল টাকা ও ভারতীয় জাল রুপি তৈরি করার একটি ঘরোয়া কারখানার সন্ধান পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার, তাইজুল ইসলাম লিটন ও মহসিন ইসলাম মিয়া।


 
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) এ তথ্য নিশ্চিত করেন গোয়েন্দা পুলিশ।
এসময় তাদের কাজ থেকে তৈরিকৃত বিভিন্ন মূল্যমানের প্রায় ২০ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি জাল টাকা এবং দেড় লাখ ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়েছে।  

এছাড়াও জাল টাকা ও রুপি তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন রকমের কালি, স্ক্রিন ফ্রেইম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যালস, স্ক্যানার মেশিন, কাটার ও স্কেল ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে জালনোট ব্যবসায়ীরা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে এই মর্মে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্য যাচাই বাছাই ও বিশ্লেষণ করে জাল মুদ্রা কারবারিদের অবস্থান শনাক্ত করে পরে অভিযান চালানো হয়।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায় জাল মুদ্রা ব্যবসায়ী গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর আলম জাল টাকা ও রুপির একটি চালান সংগ্রহ করার জন্য নাটোর থেকে ঢাকায় আসছিলেন। তাকে অনুসরণ করে গোয়েন্দা পুলিশ। তার অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ছয়তলা বিল্ডিং এর চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় টাকা ও রুপিসহ গ্রেফতার করা হয় চক্রের জাল কারবারিদের। তাদের উদ্দেশ্য বিপুল পরিমাণে জাল মুদ্রা তৈরি করে সমগ্র দেশে সাপ্লাই দেওয়া। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জাল টাকা তৈরি এবং বিক্রি করার একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাস করা গ্রেফতারকৃত লিটন এই কারখানার মূল পরিচালক এবং তিনি নিজেই মেকার। দীর্ঘদিন তিনি নীলক্ষেত এলাকায় কম্পিউটারের দোকানে গ্রাফিক্সের কাজ করত। এর ফলে তিনি বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র, দলিলাদি, জাল টাকা ও রুপি বানাতে এক্সপার্ট। লিটন বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে জোড়া লাগানো, একটি কাগজে বঙ্গবন্ধুর বা গান্ধীর ছবি স্ক্রিন প্রিন্টিং বা জলছাপ দেওয়া রংয়ের সমন্বয়ের কাজ করতে বিশেষ পারদর্শী। জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা জোড়া লাগানো হয় আইকা বা অন্যান্য গাম দিয়ে। বঙ্গবন্ধু বা মহাত্মা গান্ধীর ছবি তিনি নিজে মূল টাকা থেকে স্ক্যানিং করে পেনড্রাইভে নিয়ে রাখে। নিরাপত্তা সুতা তৈরি করার জন্য ডায়াস কিনে নিত। জলছাপ দেওয়া হলে দুইটি বিশেষ ধরনের কাগজ একসঙ্গে জোড়া দিয়ে শুকানো হতো। এরপর টাকা প্রিন্টিংয়ে নেওয়া হতো। গ্রেফতারকৃত আলী হায়দার টাকা তৈরিতে সহযোগিতাসহ এগুলো বান্ডিল আকারে বড় ডিলারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজও করে থাকত। জাল টাকা তৈরি করার পরে ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকায় বিক্রি করা হতো।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর ও মহসিন মূলত লিটনের কাছ থেকে জাল টাকা ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকায় কিনতো। এরপর তারা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভে এগুলো বিক্রি করত। গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর নওগাঁ, নাটোর, বগুড়াসহ দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের ডিলারের মাধ্যমে এই জাল টাকা ও রুপি বিক্রি করে থাকতো। এরপর খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন শহরের ব্যস্ততম এলাকায় (যেমন-রেস্টুরেন্ট, ভোজ্য সামগ্রী, প্রসাধনী, পরিধেয় বস্ত্র ইত্যাদি) ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ভালো টাকার ভেতরে জাল টাকা ঢুকিয়ে দিত। গ্রেফতারকৃত লিটন জাল রুপিগুলো পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করেছিল দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় বিক্রি করার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
এজেডএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।