ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মঙ্গল জল ঢেলে ‘বুদ্ধ স্নান’, পুরনোকে বিদায়

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
মঙ্গল জল ঢেলে ‘বুদ্ধ স্নান’, পুরনোকে বিদায়

কক্সবাজার: শিশু-কিশোরসহ আবাল বৃদ্ধ বনিতা দল বেঁধে ছুটছে বিহার (বৌদ্ধ মন্দির) থেকে  বিহারে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। সবার হাতে আছে মঙ্গল জল (পানি)।

আবার অনেকে শোভাযাত্রা সহকারে যাচ্ছেন। ঢোল, কাঁসরসহ নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তারা গাইছেন, ‘বুদ্ধ বল বলরে, বুদ্ধের মত এমন দয়াল আর নাইরে’ এরকম বুদ্ধকীর্তন। এভাবেই তারা অতি পবিত্র বুদ্ধমূর্তির শরীরে মঙ্গল জল ঢেলে স্নান করাচ্ছেন। যেটি বৌদ্ধদের বুদ্ধ স্নান উৎসব নামে পরিচিত।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষে গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ পল্লী ও বৌদ্ধ বিহারগুলোতে আয়োজন করা হয় বুদ্ধ স্নানের।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উপজেলার প্রায় ৩০টি বৌদ্ধ পল্লী ও ২৫টি বৌদ্ধ বিহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে এ উৎসব সীমিত পরিসরে পালন করা হলেও এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি, ব্যর্থতা, অপবাদ মুছে, পুরনোকে বিদায় এবং নতুন বছরের সবকটি দিন মানুষের জীবনে সুখের বারতা বয়ে আনার প্রত্যাশায় প্রতিবছর বাংলা সনের চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থ্যাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে রামুর বৌদ্ধরা বুদ্ধ  স্নানের আয়োজন করে থাকে। এ উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি গ্রামে বিরাজ করে উৎসব মুখর পরিবেশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বীপ শ্রীকুল, উখিয়ারঘোনা, জাদিপাড়া, হাইটুপি, শ্রীকুল, মেরংলোয়া, হাজারীকুল, নাশিকুল, পূর্বরাজারকুল, উত্তর মিঠাছড়িসহ অন্তত ৩০টি বৌদ্ধ পল্লীতে মহা আনন্দ উৎসবে বুদ্ধ স্নান উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

এ বছর উপজেলার মেরংলোয়া কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, রামু মৈত্রী বিহার, চেরাংঘাটা বড় ক্যাং, লামার পাড়া ক্যাং, হাজারীকুল বোধিরত্ম বিহার, রামকোট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, জাদিপাড়া আর্য্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, উখিয়ারঘোনা জেতবন বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহার, পূর্ব রাজারকুল বৌদ্ধ বিহার, উত্তর ফতেখাঁরকুল বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহার, শ্রীকুল রাখাইন বৌদ্ধবিহার, লাং চিং, সাদাচিংসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে এ আয়োজন চলে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বৌদ্ধ নেতা বিপুল বড়ুয়া আব্বু জানান, বুদ্ধের শরীরে মঙ্গল জল ঢেলে বুদ্ধ স্নান ছাড়াও এদিনে বিশেষ করে গ্রামের শিশু, কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে নানা আনন্দ আয়োজনে। অনেকে একই রকমের পোশাক পরে শোভাযাত্রা সহকারে বের হয়। অনেকে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান বাজিয়ে, রং ছিটিয়ে নেচে-গেয়ে উল্লাস করে। আবার অনেকে জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপে মাইক বেঁধে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বুদ্ধকীর্তন গাইতে গাইতে বিহার পরিদর্শন করেন। এসব ছাড়াও এদিনে প্রায় দুই যুগ ধরে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহা বিহার মাঠে আয়োজন হয়ে আসছে আনন্দ মেলা।

অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া জানান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের ঐতিহ্য এই বুদ্ধ স্নান উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তির পর দিনই বাংলা নববর্ষ এ দুইয়ে মিলে রামুর বৌদ্ধ পল্লীগুলো ভাসে উৎসবের আনন্দে।

তিনি বলেন, বুদ্ধ স্নানকে ঘিরে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিন গ্রামে গ্রামে দিনব্যাপী নানা আয়োজন থাকলেও ভোরে বুদ্ধ স্নানকে ঘিরে চলে  অন্যরকম আনন্দ।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধারণা বুদ্ধ স্নানের মাধ্যমে পুরোনো বছরের সমস্ত গ্লানি, ব্যর্থতা, জ্বরা, অপবাদসহ সব অশুভ তৎপরতা দূর হয়ে যায়।

তিনি জানান, বাংলা সনের চৈত্র মাসের শেষ দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব হিসেবে পালন করে। এ উৎসবের অন্যতম বুদ্ধ স্নান। প্রায় শতবর্ষ আগে থেকে এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বুদ্ধ স্নানের আয়োজন করে আসছে। ভোরে বুদ্ধ স্নান বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে আলাদা উৎসবে রূপ নিয়েছে।

চৈত্র সংক্রান্তিতে সন্ধ্যায় প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে আনুষ্ঠানিক ভাবে মঙ্গল প্রদীপ ও ধূপ জ্বালিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় জানানো হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় সব বৌদ্ধ বিহারে সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। মূলত জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনায় এ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
এসবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।