ঢাকা, সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তালেবানের পক্ষে যুদ্ধ করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি শফিকুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
তালেবানের পক্ষে যুদ্ধ করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি শফিকুর

ঢাকা: রমনা বটমূলে হামলার পর মুফতি শফিকুর রহমান ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত নিজের নাম পরিচয় বদলে আত্মগোপন করেন। তবে সে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যান।

এরপর আব্দুল করিম নাম ধারণ করে ২০০৮ সালে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় আত্মগোপন করেন। পরে নরসিংদীর চর এলাকার একটি মসজিদে ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমাম হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ওই মসজিদে ইমামতির আড়ালে তিনি ধর্মের নামে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা চালাতেন। কৌশলে মাঝে মধ্যে ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতেন। রমনা বটমূলে বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শফিকুল ইসলাম দীর্ঘ ২১ বছর এভাবেই আত্মগোপনে ছিলেন। তবে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৪ এপ্রিল কিশোগঞ্জের ভৈরব থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ইতোপূর্বে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবালকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ এপ্রিল রাতে র‌্যাব-২ কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামি র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- ১৪ এপ্রিল ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত বোমা হামলায় ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকে আহত হন। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলাসহ অপর একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। ওই হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যা চেষ্টার সহযোগিতাসহ ২টি পৃথক মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মুফতি শফিকুর রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। গ্রেফতার শফিকুর রহমান ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা অপর মামলারও পলাতক আসামি তিনি।

এছাড়াও ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হন। ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শফিকুর রহমান কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। গ্রেপ্তার মুফতি শফিকুরের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মোট ৬টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানায়, তিনি নিজ গ্রাম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে চকবাজার, ঢাকায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা হতে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত হেদায়ায় পড়াশোনা করেন। হেদায়া পাস করার পর ১৯৮৩ সালে পার্শ্ববর্তী দেশে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নুরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন সে আফগানিস্তানে চলে যায় এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে ফিরে আসে। বাংলাদেশে আসার পর সে ঢাকার খিলগাঁও এ একটি মাদ্রাসায় পার্ট টাইম শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচীর নিউ টাউন এ পড়াশোনা করার সময় সেই প্রতিষ্ঠানে মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে গেলে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি।

আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করে। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ এর প্রচার সম্পাদক ছিল। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদ সংগঠনের আমীর ছিলেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদ ’র সুরা সদস্য ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
এসজেএ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।