ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরে হুমকির মুখে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
ফরিদপুরে হুমকির মুখে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় গণকবরকে পিছে ফেলে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ফলে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের বীরত্বগাঁথা শেষ স্মৃতিচিহ্নও আজ হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা যায়, ৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানী ও তাদের দোসর রাজাকার আল বদর বাহিনী ছাত্রনেতা রেজাউলসহ শতাধিক মুক্তিকামী বাঙালিকে হত্যা করে সরকারি কলেজ সংলগ্ন ছনের ক্ষেতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। মূল বধ্যভূমির উপর মালিকানা শর্তে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে স্থানীয় এক ব্যক্তি।  

বাড়ি নির্মাণের সময় খননকাজে শহীদদের অস্থিকঙ্কাল উঠে এলেও বসতবাড়ির পাশেই তা পুনরায় সমাধিস্থ করে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীকালে সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমানের উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।  

স্থানীয় প্রশাসন ২০২০ সালে বোয়ালমারী পৌরসভার শিবপুর মৌজার ১২২৭ দাগের ৪৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে গণকবরটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে; দুই বছর আগে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
 
গণকবরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হওয়ায় সুরু একটি সড়ক ও সামান্য কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি জমিটির মালিক উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামের মো. খালিদ হাসান বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুপূর্ণ উপাদান মুছে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় বোয়ালমারীতে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল তার প্রমাণ কলেজ রোডস্থ এই গণকবর বা বধ্যভূমি। যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এ গণকবরটি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। ইতোপূর্বে মূল গণকবরের উপর বসতবাড়ি, গণকবর ঘেঁষে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে, যা লজ্জাজনক। বাড়ি নির্মাণের সময় খননকাজে উঠে আসা শহীদদের হাড় কঙ্কাল পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা সমাধিস্থ করে যেখানে গণকবরের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে সেটিও সংকোচন হলে শহীদদের বীরত্বগাথার ইতিহাস মুছে যাবে। এটা সংরক্ষণের জোর দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারিয়া হক বাংলানিউজকে জানান, গণকবর ঘেঁষে পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে খবর পেয়ে ইউএনও স্যার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ আমরা সরেজমিনে গিয়ে কাজটি বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছি। ২০২০ সালে গণকবরের জন্য ৪৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে- যাতে স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ১৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের সুপারিশ করেছে। এ ব্যাপারে সর্বজনস্বীকৃত একটি কমিটি গঠন করা হবে। আর এ কমিটি যেভাবে সুপারিশ করবে আমরা সে মত নিয়ে কাজ করবো।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে গণকবরের জায়গাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই সর্বজন স্বীকৃত একটি কমিটি গঠন করবো। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় রাজনীতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে ওই জায়গায় কনস্ট্রাকশনের কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।