ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে গ্রীষ্মেই ভরাবর্ষা!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
সিলেটে গ্রীষ্মেই ভরাবর্ষা!

সিলেট: প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। বর্ষা শুরু হতে এক মাস বাকি।

গ্রীষ্মকাল চললেও যেনো বর্ষার ঘনঘটা চারিদিকে। বন্যার পূর্বাবাস দেখা দিয়েছে সিলেট জুড়ে। গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদ নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে।
 
অথচ মৌসুমে যতটুকু বৃষ্টি প্রয়োজন, তার চেয়ে ৩২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু প্রকৃতিতে ঠিক যেনো উল্টো চিত্র পরখ করা যাচ্ছে।
 
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এখনকার বন্যাকে আগাম বন্যা বলছেন না। তাদের মতে, এখন বন্যার সময়। সামনে বর্ষাকাল। তবে গ্রীষ্মকালকে বর্ষা বলার পেছনে যুক্তি দেখাতে গিয়ে তারা বলেন, প্রকৃতি তার নিয়মে পরিবর্তন হচ্ছে। যে কারণে ঋতুর পরিবর্তন ঘটছে। অসময়ে বন্যা দেখা দিচ্ছে।  

তবে নদী শাসন বা খনন না হওয়ার ফলে নদীর নাব্যতা হারানোর বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা।  
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, বৈষ্ণিক উষ্ণতার কারণে প্রকৃতিতে প্রভাব পড়ছে। আগে বর্ষায় বন্যা হতো, এবার গ্রীষ্মকালেই বন্যা দেখা দিয়েছে। শনিবার কানাইঘাট বিপদ সীমা (ডেঞ্জার লেভেল) থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার বেশি রয়েছে সুরমায় পানি। এছাড়া সুরমায় জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টেও পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।  
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবো’র এক কর্মকর্তা বলেন, সিলেটে প্রধানতম নদী সুরমার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে ডেঞ্জার লেভেলের পরিমাপও ঠিক থাকেনি। এটা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। আর সুরমা ছোট নদী, তার উপর ঘন ঘন সেতুর কারণে নাব্যতা হারানোও অসময়ে বন্যা ও ফসলহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
এদিকে, টানা বৃষ্টি ও উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে অসময়ে বন্যারে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নিম্নাঞ্চলগুলো পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।
 
আর পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি ঢুকছে। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানিও ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে কুশিয়ারা নদীর পানির তোড়ে হাকালুকি হাওর এখন পানিতে টইটম্বুর। দু’দিন আগেও ধীরে ধীরে পানি বাড়ছিল। কিন্তু গত দুই দিনের ভারি বর্ষণে হাওর ভরে বসতি সংলগ্ন এলাকায় পানি চলে এসেছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে মোষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বেশ কিছুটা বেড়েছে। সিলেটের ছয় উপজেলা জুড়ে বিস্তৃর্ণ হাকালুকিতে ৫টি পাহাড়ি নদী-সোনাই, কন্টিনালা, ফানাই-আন ফানাই, জুড়ি নদী দিয়ে উজান থেকে পানি হাকালুকিতে নামছে এবং কুশিয়ারার পানির জুয়ারে দু’দিনেই টয়টম্বুর হাকালুকি।  
 
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইনসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। উজানে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সীমান্ত এলাকা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
 
আবহাওয়া অধিদফতর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ মাসে গড় বৃষ্টিপাত ৫৮১ মিলি মিটার হওয়ার কথা। সে হিসেবে ৩২ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত মাসেও ২৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের কারণে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।  
 
তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার সিলেটে ভারি বর্ষণ হয়েছে। এই বৃষ্টি এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকা মূলত; সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে। আগামি ১৮ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ফলে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
এনইউ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।