ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মিনিটেই বাড়ছে পানি, ডুবছে সিলেট নগরী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
মিনিটেই বাড়ছে পানি, ডুবছে সিলেট নগরী

সিলেট: মিনিটে মিনিটে বাড়ছে পানি। বৃষ্টি না হলেও ভারত থেকে নেমে আসা পানির সংকুলান হচ্ছে না সুরমার বুকে।

তাই নদীর পানি বেড়ে ডুবছে সিলেট নগরী।

সোমবার (১৬ মে) সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে এমন অবস্থা দেখা যায়।

বিপদসীমা অতিক্রম করা ভরা সুরমার পানিতে নগরের ছড়াখাল ভরে গিয়ে রাস্তাঘাট ডুবছে। অনেকের বাসা-বাড়িতে নিচের ফ্লোরে পানি চলে গেলে। যত সময় যাচ্ছে, ততই জোয়ারের ন্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি।

আর টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাবে সিলেট নগরী। সোমবার দিনেও বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে পানি মাড়িয়েছে। পানি ঢুকে বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

আগামী ২৪ ঘণ্টা এ অবস্থা চলতে থাকলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে মনে করছেন নগরের বাসিন্দারা। অনেকে বাসা-বাড়িতে পানি ওঠার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন।  

যেসব রাস্তা-ঘাটে বিগত দিনে বন্যায়ও পানির দেখা পায়নি। সেসব সড়কে, হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি- দোকানপাটে পানি উঠে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকে সিলেটে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে সে বৃষ্টি এখন পর্যন্ত চলমান। বুধবার থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে শুরু করে। বৃষ্টির পানি এভাবে উঠে আবার নেমে যায়, নগরবাসীর এমন আশঙ্কাকে এবার ম্লান করে দিয়ে সুরমায় আচমকা জোয়ারের গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সোমবার দিনে বৃষ্টিপাত না হলেও দিবাগত ১২ টার দিকে পানি নেমে যাওয়ার বদলে আরও বাড়ছে। সুরমার তীরে বসবাসকারী ভুক্তভোগী পরিবারের অনেকে বাসা-বাড়ি ফেলে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।  

নগরের মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম সামি বলেন, দিনের বেলা সড়কে জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে চলতে হয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে পানি ঢোকার কারণে অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে ৩ পরিবার এরইমধ্যে অন্যত্র সরে গেছেন। বাড়ির আঙিনায়ও পানি উঠেছে। বানের পানি ও বাসা-বাড়ির পানি একাকার হয়ে গেছে। রাতে কি অবস্থা হয় আল্লাহ জানেন। সবাই আশঙ্কার মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন। রাত ১টা ৫ মিনিটে ক্রমশ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ছড়ারপাড়ের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন সিয়াম বলেন, ছড়ার পানি চালিবন্দর-ছড়ারপাড় সড়কে উঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কলোনীতে এরইমধ্যে পানি উঠে গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পানি উঠে গেছে। মানুষজন আতঙ্কে বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাছাড়া দিনমজুর ও কলোনীর নিম্ন আয়ের মানুষদের অন্যত্র আশ্রয়ে সুযোগ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

জলাবদ্ধতা সৃষ্ট এলাকাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, পাঠানটুলা, লন্ডনি রোড, সাগরদিঘির পাড়, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্তখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়া এলাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা-কুশিয়ারা, লোভা, সারি ও দলাই নদীর পানি ৭টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদন অনুযায়ী কানাইঘাটে সুরমার পানি ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না থাকলেও গতকালের চেয়ে ওই পয়েন্টে আজ আরও ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সিলেটে সুরমার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উৎসমুখ আমলশীদে কুশিয়ার নদীর পানি ১৩০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে, সারি নদীতে ২ সেন্টিমিটার, লোভা ছড়ায় পানির গতি প্রবাহ ১৪.৬৫ সেন্টিমিটারে প্রবাহমান রয়েছে।    

জানা গেছে, বরাক মোহনা থেকে উৎপত্তিস্থল লেকে সুরমা নদীর ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগরের বুক চিড়ে সুনামগঞ্জ জেলার বাউলাই নদীর মোহনায় গিয়ে মিশেছে। শুষ্ক মৌসুমে সুরমার তলদেশ চারণ ভূমিতে পরিণত হয়। যে নদী দিয়ে একসময় জাহাজ চলতো। সেই সুরমার বুকে শুষ্ক মৌসুমে খেলার মাঠে পরিণত হয়। আর ঘন ঘন সেতু দিয়ে নদী শাসন করায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়াতে বর্ষায় বৃষ্টি ও উজানের নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সহজেই টইটুম্বুর হয় সুরমা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ফের সুরমা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ সমীক্ষা প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নদীটির উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে ৩৫টি জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে তলদেশ। এ অবস্থায় এ নদীর খনন ছাড়া সিলেট নগরীর সুরমা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
এনইউ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।