ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঘটনাস্থলে না থেকেও হত্যা মামলা আসামি তারা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
ঘটনাস্থলে না থেকেও হত্যা মামলা আসামি তারা!

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সুখচর গ্রামে শাহজাহান মিয়া হত্যার সময় এলাকায় না থাকলেও মামলার বিবরণে ফিকল দিয়ে আঘাত করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে একজন ঘটনার সময় অন্তত ২২ কিলোমিটার দূরে ব্যবসা করছিলেন আর অন্যজন ছিলেন আরেকটি গ্রামে মৃত ব্যক্তির নামাজে জানাজায়।


 
হত্যা মামলাটির ছয় নম্বর আসামি কুলদীপ দাস রাজু ঘটনার সময় হবিগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি রোডে নিজের দোকানে বসে ব্যবসা করছিলেন এবং ১২ নম্বর আসামি ফরিদ মিয়া ছিলেন একজন মৃত নারীর নামাজে জানাজায়।
 
ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মারা যাওয়া নারীর সন্তানের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামলায় আসামি হওয়া এই দুইজন রাজনীতি এবং সমাজে ইতিবাচক কার্যকমের সঙ্গে জড়িত। এদের মামলার আসামি করার বিষয়টি এলাকায় সমালোচিত হয়েছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ মে সুখচর গ্রামের শাহজাহান মিয়াকে (৪০) পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও আর ৪/৫ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
 
মামলাটিতে আসামির তালিকায় ছয় নম্বর ক্রমিকে যুক্ত করা হয়েছে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হবিগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি রোডস্থ বাটা শো রুমের পরিচালক কুলদীপ দাস রাজু এবং ১২ নম্বর ক্রমিকে রাজিউড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মিয়া। ঘটনার পর থেকে তারা গ্রেফতারের আশঙ্কায় রয়েছেন।
 
মামলায় হত্যার সময় উল্লেখ করা হয়েছে ৬ মে আনুমানিক দুপুর দেড়টা। এজাহারে বলা হয় কুলদীপ দাশ রাজু ফিকল দিয়ে শাহজাহানের বুকে আঘাত করেছেন এবং ফরিদ মিয়া ভিকটিমের পা কেটে দিয়েছেন। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ওইদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্তু রাজু জেলা শহরে বাটার দোকানে ব্যবসা করেছেন।
 
এছাড়া ১২ নম্বর ক্রমিকের আসামি ফরিদ মিয়া সেদিন জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়েই পার্শ্ববর্তী চানপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মিয়ার মায়ের নামাজে জানাজায় চলে যান। জানাজায় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মৃত নারীর ছেলে ফরিদ মিয়া।
 
এ বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত কুলদীপ দাশ রাজুর স্ত্রী মুক্তি দাশ ও ফরিদ মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তারা বলেছেন, এলাকায় দুইটি পক্ষে জায়গা-জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব ছিল। এ নিয়েই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের পরিবারও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা নিজেদের আড়াল করতে কুলদীপ দাশ রাজু ও ফরিদ মিয়াকে আসামি করেছে। আমরা এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
 
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কুলদীপ দাশ রাজু ও ফরিদ মিয়া এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। ঘটনার সময় তারা এলাকায় ছিলেন না। এভাবে তাদের মামলায় জড়ানো উচিত হয়নি। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জের একজন প্রবীণ আইনজীবী বলেন, তারা হত্যা মামলার এফআইআরভুক্ত আসামি কিন্তু দুইজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করছেন এবং তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা আদালতে প্রমাণগুলো উপস্থাপন করলে সেগুলো গ্রহণযোগ্য হলে তারা অবশ্যই অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।