ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যার পানি কমলেও সিলেটে বাড়ছে নানা দুর্ভোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
বন্যার পানি কমলেও সিলেটে বাড়ছে নানা দুর্ভোগ

সিলেট: সিলেটে নদ-নদীর পানি কমায় বন্যার পানিও নেমে যেতে শুরু করেছে। প্লাবিত এলাকাগুলোয় অবস্থার উন্নতি হলেও ভোগান্তি বাড়ছে জনসাধারণের।

নগর এলাকার অলিগলিতে থাকা ড্রেনের পানি উঠে আসায় স্থানীয়রা বিপাকে পড়েছেন। পানির সঙ্গে উঠে আসছে ময়লা আবর্জনা, এছাড়া দুর্গন্ধের কারণে চলাচলে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

নগর এলাকায় বন্যার পানিতে সড়কে উঠে আসা ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়ির টয়লেটের খোলা ট্যাংকি ও বাথরুম থেকে ছড়িয়ে পড়া ময়লাযুক্ত পানিতে সড়ক ভেসে গেছে।

বন্যার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির টিউবওয়েল ও মোটর তলিয়ে যাওয়ায় কাদাযুক্ত পানি আসছে। ফলে খাবার ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য পানির ভোগান্তি রয়ে গেছে।

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ জনপদেও বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। যেসব এলাকার পানি নেমে গেছে সেখানকার লোকজন নিজেদের বাসস্থান মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। কাঁচা ঘর-বাড়ি ও টয়লেট মেরামত করতে দেখা গেছে অনেককে।

পান কমলেও নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে প্রান্তিক মানুষের সংকট কাটেনি। তাদের খাবার-পানির সংকট রয়ে গেছে। আয়-রোজগারহীন বন্যা উপদ্রুত এলাকার লোকজন নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।  

মঙ্গলবার (২২ মে) পর্যন্ত নগরের দুর্গত এলাকার পানি নামলেও সহসাই বাসা-বাড়িতে ফিরতে পারছেন না বাসিন্দারা। অনেকে শ্রমিক দিয়ে বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করাচ্ছেন। তবে দুর্গন্ধের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি রয়ে গেছে।

নগর কর্তৃপক্ষ বলছে,পানি পুরোপুরি না নামলে ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করা সম্ভব হবে না।

চিকিৎসকরা জানিয়েছে, বন্যা পরবর্তী অবস্থায় রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে প্রকট আকার ধারণ করবে। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের অভিজাত এলাকা উপশহরের বিভিন্ন ব্লক, তেররতন, যতরপুর, সাদারপাড়া, সুবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, চালিবন্দর, ছড়ারপার, কুশিঘাট, তালতলা, শেখঘাট, কলাপাড়া ও জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি জমে আছে, তবে তা থেকে ছড়াচ্ছে বাজে গন্ধ।

সংকটপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও অলিগলি ও বাসা-বাড়িতে রয়ে গেছে। দুর্গত এলাকায় বাসা-বাড়িতে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আটকে থাকা ময়লা আবর্জনা ছাড়াও ঘর-বাড়ির কাপড়-বিছানাপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভিজে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের বাসা-বাড়িগুলোয় এখনও বন্যার পানি জমে আছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কনজারভেটিভ অফিসার হানিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পানি এখনও সব এলাকা থেকে নামেনি। আজ থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হচ্ছে। তাছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকায় গাড়ি দিয়ে খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে এমনিতে দুর্গন্ধ ছড়ায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে ডায়রিয়াসহ চর্মরোগের প্রভাব দেখা দিতে পারে। এ জন্য নগর এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মেডিক্যাল টিম রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আরও ৬টি মেডিক্যাল টিম মাঠে নামানো হয়েছে।

বন্যার্ত এলাকার জনসাধারণ সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক। বন্য কমে গেছে মনে করে যেসব টিউবওয়েল অর্ধেকও পানিতে তলিয়ে গেছে। সিসিকের সাপ্লাইয়ের পানি হিসেবে অন্তত ১ সপ্তাহ ব্যবহার না করার অনুরোধও করেন তিনি। তিনি বলেন, দুর্গত এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া টিউবওয়েলগুলোর ময়লা পানি বের হতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগে। তাই পানি পান করতে হলেও বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট দিয়ে অন্তত আধাঘণ্টা রেখে পান উপযোগী করে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মঙ্গলবারও সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি হ্রাস পেয়েছে। দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ ছিল ৪৬ সেন্টিমিটারে। সিলেটে সুরমার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। অমলশীদে কুশিয়ারা পানি এখনো বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি এখনো বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। তবে ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ১৪২ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি প্লাবিত রয়েছে। এছাড়া পাহাড়ি নদী লোভাছড়া, সারি ও ধলাই নদীর পানি কমেছে।

সিলেট শহরের মতো জেলার সবকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগ রাস্তাঘাট থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে নিম্নাঞ্চলে এখনো বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বাসাবাড়ির তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আব্দুল মোমেন। তার এমন নির্দেশের পর করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চতর সমন্বয় কমিটি গঠন করেছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।