ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কয়রায় আইলার ক্ষত শুকায়নি ১৩ বছরেও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
কয়রায় আইলার ক্ষত শুকায়নি ১৩ বছরেও

খুলনা: বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলায় ক্ষত ও ক্ষতির চিহ্নগুলো সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার উপকূলবাসী আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন। আশ্রয়হীন জনপদে এখনো চলছে অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান ও খাবার পানির তীব্র হাহাকার।

দীর্ঘ ১৩ বছর পরও ভয়াল সেই ঘূর্ণিঝড়ের কথা আজও ভোলেননি অবহেলিত কয়রার মানুষ। রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আইলার সেই স্মৃতি, যা দেখলেই মনে করিয়ে দেয় দুর্বিষহ দিনগুলির কথা।

 বুধবার (২৫ মে) কয়রায় অনেক গ্রামে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হবে আইলা দিবস। নতুন প্রজন্মকে সে দিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি অর্থাৎ কষ্টের দিনগুলির কথা জানাতে এমন আয়োজন করা হয় কয়রায়। অথচ এক যুগেরও বেশি সময় পার হলেও আইলার অনেক বড় বড় ক্ষত রয়ে গেছে কয়রায়। কিন্তু সে বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপ না নেওয়ায় আরও বেশি মনে করিয়ে দেয় আইলার কষ্টের দিনগুলির কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রার পবনার বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণে দক্ষিণ মঠবাড়ী গ্রামকে দু’ভাগ করে সৈয়দখালী নামক একটি শাখা নদী তৈরি হয়েছিল। যেখানে আজও স্কুল কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় হাজারো মানুষকে প্রতিদিন খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে দেখা যায়। অন্যদিকে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়সিং গ্রামের নতুন বাজার সংলগ্ন হারেজ খালিতে আজও খেয়াপারাপার অব্যাহত আছে এবং প্রতিদিন ৫ শতাধিক মানুষ ঝুঁকির নিয়ে পারাপার হন।

অনুরূপ আইলার ক্ষতচি‎‎হ্ন আজও দৃশ্যমান বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একাধিক বাড়ি-ঘরে। এছাড়া উপজেলার ৪ ও ৫ নং কয়রা এবং হরিহরপুর, পদ্মপুকুর, গাতীরঘেরি, হাজত খালী গ্রামের অনেক পরিবার আজও বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন।

এদিকে আইলা পরবর্তী দীর্ঘ ১৩ বছর হরিহরপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন ৭২ বছরের বৃদ্ধ আনার মোল্যা ও তার স্ত্রী ফুলি বিবি। তারা বলেন, আইলায় আমাদের কয়েক কাঠা জমির ওপর থাকা বাড়ি-ঘর এখন ওই চোরামুখা গেটের খালের মধ্যে, সেখানে এখন ১০/১২ হাত পানি। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে অন্য এলাকায় বসবাস করে, আর আমরা বুড়োবুড়ি সেই থেকে বাঁধের ওপর খুপড়ির মধ্যে থাকি।

তারা জানান, কপোতাক্ষ নদী চরে চিংড়ীপোনা ধরে কোন রকমে দুই জনের খাবার জোগান। তবে কেউ এখন আর খোঁজ নেয় না। একটা সরকারি ঘর পেলে সেখানে জীবনের বাকি দিনগুলি কাটিয়ে দেবেন।

তবে শুধু আনার মোল্লা নয়, ৫ নং কয়রা বাঁধের ওপর বসবাস ৭৫ বছরের অন্ধ রহিম বক্সসহ করিমন বিবি, জহিরন ও ভদি বিবিদের। অথচ একদিন তাদেরও ঘরবাড়ি সবই ছিল। কিন্তু আইলার কারণে সবকিছু কয়রা নদী গ্রাস করায় তাদের ঘরে ফেরার সুযোগ নেই।

কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলাম জানান, তিনি কয়েক মাস হল নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু আইলা নয় ফণি, আম্পান ও সর্বশেষ ইয়াসে কয়রা ইউনিয়নের মতো অন্য ইউনিয়নেও অনেক ক্ষত চি‎হ্ন রয়েছে। নির্বাচিত হয়েই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহ ও ভূমিহীন অসহায় পরিবারের তালিকা তৈরি করে দ্রুত ঘর নির্মাণসহ সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতার প্রস্তুতি নিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়:২১৫০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad