ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যায় সিলেটে এক ইউনিয়নেই গৃহহারা ২শ পরিবার!

নাসির উদ্দিন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
বন্যায় সিলেটে এক ইউনিয়নেই গৃহহারা ২শ পরিবার! ছবি-মাহমুদ হোসেন

সিলেট: বন্যা, ঝড় তুফানে গৃহহীন হয়েছেন অনেকে। তাদের একজন কৃষক আব্দুস শুকুর।

চার সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় ঘর মেরামত করার সামর্থ্যও নেই তার।  
 
তার মতো বানের তোড়ে ভেসে গেছে অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি। কারো ঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে তুফানে। সেসব পরিবারের লোকজন এখন আশ্রয় নিয়ে থাকছেন অন্যের বাড়িতে। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই।
 
মঙ্গলবার (২৪ মে) বন্যা পরবর্তী সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।  
 
একই গ্রামের শুজুর মিয়ার বসতঘর গত সোমবারের তুফানে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে। নতুন ঘর নির্মাণ কিভাবে করবেন নিজেই জানেন না।
 

তিনি বলেন, ‘বন্যায় ঘরে পানি উঠেছে। আর তুফানে ঘর মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। তাই খুব কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে থাকছি। ’
 
ঘোড়ামাড়া গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের কাঁচা বসতঘরও পড়ে গেছে। তিনিও পরের ঘরে আছেন।
 
পশ্চিম পেকের খাল গ্রামের মৎস্যজীবী দিনেশ বিশ্বাস এবং রতন বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেছে বন্যার পানি। আর তুফানে পড়ে গেছে বসতঘর।
 
এই এলাকায় যারা পানিবন্দি হয়েছেন, বাড়ির উঠানে থাকা চুলায় তাদের রান্না করা সম্ভব হয়নি। টিনের টুকরোতে, বেতের ঝাঁপিতে মাটির চুলো বানিয়ে রান্না করে দু'মুঠো অন্নের স্বাদ পাচ্ছেন কেবল। দুর্বিসহ জীবনযাপন তাদের। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন, কিংবা আষাঢ়ের গল্পের মতে হতে পারে! অবস্থা দৃষ্টে সেসব দিনমজুরদের নিদারুণ কষ্টে যে কারো চোখের জল আসবে।
 
স্থানীয় ঘোড়ামাড়া, তুরুবাগ, পশ্চিম পেকেরখাল, লস্করকান্দি ঘুরে দেখা গেছে, ছালমা, দিনেস, মনফর, জৈন উদ্দিন, মাসুক, পাখি বিশ্বাস, ইন্তাজ আলী, তজমুল আলীদের পরিবারের রান্না চলছে টিন আর ঝাঁপিতে (টুকরি) তৈরি চুলায়।
 
গ্রামের ছুরন বিবির গল্প যেন আসমানির গল্পকেও হার মানায়। তিনি বলেন, ‘বাফরে (বাবারে) কিজাত (কি রমক) কষ্টে যে আছি, কিতা কইতাম? ছুলাত (চুলায়) আগুন ধরানিও যায় না। ’
 
সম্প্রতিকালের বন্যায় শুকুর মিয়া, ইসলাম, দিনেস ছুরন বিবির মত গৃহহারা হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ।
 
সরেজমিন দেখা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৮ নম্বর তোয়াকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধুমাত্র এই ওয়ার্ডে অন্তত ১০ পরিবার সম্পূর্ণরূপে গৃহহারা হয়েছেন। এই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
 
স্থানীয় ইউপি সদস্য উমর আলী বলেন, তার ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। অধিকাংশ এলাকা এখনো পানিবন্দি। ফসলি জমি পানি তলিয়ে গেছে আগেই। বন্যা ও ঝড়-তুফানে বসতঘর ভেঙে গৃহহারা হয়ে পরা মানুষগুলো অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থাকছেন।
 
তিনি বলেন, অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
 
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাটের ৮ নম্বর তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লুকমান মিয়া বলেন, বন্যায় তার ইউনিয়নের প্রায় ২শ' মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। এছাড়া পুরো ইউনিয়ন জুড়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে সম্পৃক্ত সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা পুনরায় কার্পেটিং, ইটসলিং করতে হবে।
 
তিনি বলেন, সোমবার উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ইউপি সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে বলে দেওয়া হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলেই আমরা ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।