ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কেউ অভিযোগ না শুনলে শুনবে জিআরএস

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
কেউ অভিযোগ না শুনলে শুনবে জিআরএস

রাজশাহী: এপ্রিল জুড়েই রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে দেশের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ। এমন কাট ফাটা গরমে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ সমস্যায় পড়েন- বেসরকারি একটি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক আবরার শাঈর।

ঘটনাটি ছিল ২৪ এপ্রিলের। রাত ৮টার পর যখন মাথার ওপরের বৈদ্যুতিক পাখাটাও আর ঘুরছিল না, তখন তিনি অভিযোগ জানালেন নেসকোর হটলাইনে।

সেখান থেকে অভিযোগ লিখে নিয়ে বলা হলো- আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর প্রথম প্রহর গেলো, দ্বিতীয় প্রহর গেলো, গরমের রাত আর কাটেনা তার ও তার পরিবারের সদস্যদের। ভোরে আবারও অভিযোগ দিলেন। বললেন, সমস্যাটা তার একার নয়, এলাকার অনেকেরই। সেবারও হটলাইন থেকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। কিন্তু এরপরও ঠিক হয়নি!

উপায় না পেয়ে এবার তিনি নেসকোর ওই ডিভিশনের প্রকৌশলীকে ফোন করলেন। তিনি একটি টেলিফোন নম্বর ধরিয়ে দিলেন। যেখানে বারবার ফোন করলেও কেউ ধরেনি! দুর্ভোগ যখন চরমে তখন তিনি আশ্রয় নিলেন- সরকারের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ওয়েবসাইটের। অনলাইনে বসে সব অভিযোগ সবিস্তারে লিখলেন। পাঠিয়েও দিলেন। মুহূর্তেই মোবাইলে এসএমএস এলো অভিযোগ গ্রহণ হয়েছে। এরপর বেলা ১১টার মধ্যেই সব সমস্যার সমাধান!

সংবাদ কর্মী আবরার শাঈর বাংলানিউজকে জানান, এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত নেসকো কর্মকর্তারা অন্তত চার বার ফোন দিয়েছিলেন তার মোবাইলে। তারা জানতে চেয়েছিলেন আর কোনো অভিযোগ আছে কী না? আর নেসকোর এ সেবায় তিনি সন্তুষ্ট কী না?

এ তো গেল একজন সংবাদ কর্মীর কথা। তবে কেবল তার জন্যই নয়- দেশের প্রতিটি নাগরিকের এমন সমস্যা, দুর্ভোগ ও হয়রানির অভিযোগ শুনছে; জানছে এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করছে জিআরএস। এটি সরকারের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ওয়েবসাইট।

সরকারি কোনো সেবা নিয়ে সমস্যায় পড়লে বা কোনো অভিযোগ থাকলে যে কেউ এখন ঘরে বসেই অনলাইনে www.grs.gov.bd- এ ওয়েবসাইটে গিয়ে অভিযোগ করতে পারবেন। সমাধানও পাবেন। যখন কেউ অভিযোগ শুনছে না তখন শুনবে জিআরএস। এই ওয়েবসাইটে গিয়ে মোট ১৭টি ধাপে যে কেউ প্রতিশ্রুত সেবা না পেলে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

কেবল মাত্র না জানার কারণে নাগরিকরা সমস্যার অভিযোগ নিয়ে সরকারি অফিসের দ্বারেদ্বারে ঘোরেন। অথচ সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকার নাগরিকদের জন্য অন্যতম প্ল্যাটফর্ম করে রেখেছেন।

জিআরএস: এটি সরকারের কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে- গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম। সংক্ষেপে তাকে জিআরএস বলা হয়। এটি মূলত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকর্তৃক প্রদানকৃত সেবা নিশ্চিতকরণের জন্য অন্যন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। জিআরএস ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দপ্তরে একজন নাগরিক যে কোনো সেবার বিরুদ্ধে তার অসন্তোষ বা ক্ষোভ জানিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের পর এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ প্রতিকারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। এছাড়া লগইন করেও হালনাগাদ তথ্য জানা যাবে। ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখে অজ্ঞাতনামা হিসেবেও অভিযোগ করা যাবে। তবে সেই ক্ষেত্রে অভিযোগ সম্পর্কে পরবর্তী কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না।

নিবন্ধন: অভিযোগ প্রতিকার সংক্রান্ত যেকোনো সেবা পেতে আপনাকে অবশ্যই জিআরএস সেবায় নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধনের জন্য অভিযোগকারী লগইন পেইজের ‘নিবন্ধন’ চিহ্নিত লিংকে ক্লিক করলে অভিযোগকারী তথ্যের ফরম আসবে। এখানে বাধ্যতামূলকভাবে মোবাইল নম্বর, পুরো নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মনিবন্ধন সনদ নম্বর অথবা পাসপোর্ট নম্বর দিতে হবে। এছাড়া স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্যসহ কিছু ঐচ্ছিক তথ্য দিয়ে ফরমের নিচের নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করতে হবে। সফলভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন হলে আপনাকে এসএমএস ও ইমেইলের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হবে এবং আপনার দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি পিন নম্বর এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এ পিন ব্যবহার করে আপনি অভিযোগকারী হিসেবে লগইন করতে পারবেন।

অভিযোগ দাখিল করতে হবে যেভাবে: অভিযোগ দাখিলের জন্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থায় লগইন করতে হবে। এরপর প্রথমেই যে অভিযোগ তালিকা দেখা যাবে তার ওপরের ডানদিকে 'নতুন অভিযোগ' বাটনে ক্লিক করলে একটি ফরম আসবে। অথবা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার হোমপেইজের 'অভিযোগ দাখিল' বাটনে ক্লিক করে 'নাগরিক অভিযোগ' অপশনটি নির্বাচন করেও অভিযোগ দায়ের করা যাবে।

অভিযোগ দাখিল ফরমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সেবা নির্বাচন, সেবা আবেদনের তারিখ, অভিযোগকারীর নাম, অভিযোগের বিষয়, বর্ণনা ও প্রয়োজনীয় সংযুক্তি প্রদান করে অভিযোগ প্রেরণ বাটনে ক্লিক করলে অভিযোগটি সঙ্গে সঙ্গেই ওই দপ্তরের অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। অভিযোগটি সফলভাবে গেলে একটি রিসিপ্ট দেখা যাবে। যেখানে অভিযোগের ট্র্যাকিং নম্বর ও অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তার তথ্য দেখা যাবে ও প্রিন্ট করা যাবে। অভিযোগের অগ্রগতি ও সর্বশেষ অবস্থা জানাতে এ ট্র্যাকিং নম্বরটি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। অভিযোগ দাখিলের পর নিষ্পত্তির সময়সীমা ৬০ দিন পর্যন্ত।

আপিল: দাখিলকৃত অভিযোগটি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে আপনাকে এসএমএস ও ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার ওপর আপনি যদি সন্তষ্ট না হয়ে থাকেন তবে আপনি আপিল করতে পারেন। আপনার অভিযোগটি যদি কোনো কারণে নথিজাত করা হয়ে থাকলেও আপনি আপিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণের ওপরে ডানপাশে 'আপিল করুন' বাটন দেখা যাবে। এ বাটনে ক্লিক করলে আপনার অভিযোগটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপিল হয়ে সংশ্লিষ্ট আপিল কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে এবং আপিল কর্মকর্তার তথ্য দেখানো হবে। আপিলটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে।

অভিযোগ ট্র্যাকিং: অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থায় দাখিলকৃত কোনো অভিযোগের অগ্রগতি বা সর্বশেষ অবস্থা জানতে সহজ উপায় হলো 'অভিযোগ ট্র্যাকিং'। একজন নিবন্ধিত অভিযোগকারী হিসেবে অভিযোগ দাখিল করে পরবর্তীতে সিস্টেমে লগইন না করে এবং অভিযোগের বিস্তারিত না দেখেও সহজেই আপনি আপনার অভিযোগটি ট্র্যাক করতে পারেন। এক্ষেত্রে হোমপেইজে 'অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা' অপশনটতে ক্লিক করলে অভিযোগ ট্র্যাকিংয়ের একটি ফরম দেখা যাবে। এ ফরমে আপনার মোবাইল নম্বর ও যে অভিযোগটির বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন তার ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে 'অবস্থা জানুন' বাটনে ক্লিক করলে অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা, দাখিলের সময় ও নিষ্পত্তির সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

রাজশাহীর সিনিয়র তথ্য অফিসার ফারুক মো. আব্দুল মুনিম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা হচ্ছে নাগরিকের নিজ পরিচয় দিয়ে অথবা গোপন রেখে সরকারি সেবাদাতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করবার একটি পদ্ধতি।

এখানে অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে নাগরিক তার অসন্তুষ্টি ও সংক্ষুব্ধতা প্রকাশ করতে পারবেন। মূলত এর মাধ্যমে সরকার দ্রুত ও সহজে সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি সেবাদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়। দুর্নীতি দূরীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাই ব্যবস্থাগত উন্নয়ন জিআরএস প্রচারণায় জোর দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারি মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সময়:১২২৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এসএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।