ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আনাচে-কানাচে মিলছে মরণনেশা ইয়াবা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২২
আনাচে-কানাচে মিলছে মরণনেশা ইয়াবা!

ঢাকা: মদ, গাঁজা, ফেনসিডিলের প্রচলনের পর ১৯৯৯ সালে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট আবির্ভাব ঘটে। ইয়াবাকে বলা হয় ক্রেজি মেডিসিন (Crazy Medicine)।

ধীরে ধীরে দেশের যুব সমাজে ছড়িয়ে পড়ে ওই ট্যাবলেট। গত ২২ বছরে ইয়াবা ট্যাবলেট সহজলভ্যতা বাড়তে থাকে। এখন বাংলাদেশের সবখানে, আনাচে-কানাচে মিলছে মরণনেশা ইয়াবা!

প্রথমে মিয়ানমার থেকে সীমান্তবর্তী নাফ নদী পার হয়ে এই ট্যাবলেট বাংলাদেশে ঢুকতো। বর্তমানে মিয়ানমার ছাড়াও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়েও ইয়াবা ট্যাবলেটের পাচার করছেন মাদক চোরাচালানিরা। অসাধু ও রাজনৈতিক প্রভাবে তৈরি হয় মাদকের বড় বড় সিন্ডিকেট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ আসামিও ধরা পড়ছে, তবুও চলছে ইয়াবার কারবার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশে ৩০ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৩২৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।  

এদিকে ২০২০ সালে ৩৬ কোটি ৩৮ লাখ ১ হাজার ১৭ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ইয়াবার বিস্তারও বেড়েছে। ২০২১ সালের ইয়াবার উদ্ধার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০১৯ সাল ও ২০২০ সালের তুলনামূলকভাবে ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

ডিএনসি কর্মকর্তারা জানান, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে পাচারকারীদের মাধ্যমে মরণনেশা ইয়াবা বাংলাদেশের ঢুকছে। পাচারকারী ও মাদক কারবারিরা ইয়াবা পাচারে অভিনব সব কৌশল ব্যবহার করছে।  

এতে দেখা যায়, পাচারকারীরা মানবদেহের পাকস্থলীতে করেও সহস্রাধিক ইয়াবা বহন করে আসছে। সবমিলিয়ে ইয়াবার সহজলভ্যতা কমে যায়নি। প্রতিদিনই ইয়াবাসহ মাদক কারবারিরা গ্রেফতার হচ্ছে। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধারও করা হচ্ছে। তবুও কমছে না ইয়াবা সেবনকারী ও পাচারকারীদের সংখ্যা।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রে উপ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ডিএনসির অভিযান চলছে। আমরা আসামি গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলেও তারা কারাগার থেকে বের হয়ে একই কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। তবে, ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে ডিএনসি জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে।

২৭ মে রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন ও তল্লাশির মাধ্যমে মো. জুয়েল (৩৭) ও মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩২) নামে দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। অভিযানে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার তল্লাশি করে পেছনের ডালার ভেতর থেকে দুইটি প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৩৫৩ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানি দাস বলেন, গ্রেফতার আসামিরা পেশাদার মাদক কারবারি। তারা বিভিন্ন যাত্রীবাহী পরিবহনের মাধ্যমে যাত্রী সেজে কৌশলে মাদকদ্রব্য পাচার করে আসছিলেন। তারা কুমিল্লা থেকে প্রাইভেটকারে করে কৌশলে ফেনসিডিল নিয়ে আসছিলেন।

এর আগে, ১২ মে রাতে যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৬০ ইয়াবাসহ দিদার মজুমদার (৫১) নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)। জব্দ করা ইয়াবার বাজারমূল্য আনুমানিক ১৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। একই মাসের ৬ মে রাতে বাড্ডা পুরাতন জামে মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫২ লিটার দেশি চোলাই মদসহ শাকিল আহম্মেদ (২৭) নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর মিটফোর্ড গেন্ডারিয়া থানাধীন ৪৩/২৪ স্বামীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক দম্পতি ও এক সহযোগীসহ মোট তিনজনকে ৩৯ গ্রাম হেরোইন মাদক জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মো. তাকরিম আহমেদ (২৩) ও তার স্ত্রী সিমরান হোসেন (২২) ও তাদের এক সহযোগী নার্গিস বেগম (৩৯)। মাদক কারবারে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। ওই মোটরসাইকেলের সামনে ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার ছিল।

শুক্রবার (২৭ মে) কক্সবাজার রিজিয়নে ৩৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৫ টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজার রিজিয়ন।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কারবারিদের গ্রেফতার করলেও তারা জামিনে বের হয়ে আসছে।  এদিকে কারবারিরা থেমে নেই। তারা প্রতিনিয়ত কৌশল পাল্টে বিভিন্ন কায়দায় ইয়াবা পাচার করে আসছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সীমান্ত এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে মাদকের বাজার দেশের অভ্যন্তরীণে থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক কষ্টসাধ্য।

২০২১ সালে (গত ১ বছরে) বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের আওতায় থাকা ব্যাটালিয়নগুলো মালিকবিহীন যেসব মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৪৭৭ ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৩ কেজি ৭৫২ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস; ৬ হাজার ৭৬৭ ক্যান বিয়ার; ১ হাজার ৩৩৯ বোতল মদ; ১৫৪ বোতল ফেনসিডিল; ২০৬ লিটার বাংলা মদ; ১৭ কেজি গাঁজা; ৪৮ হাজার ১৯ পিস বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট; ১০ হাজার ৯৮৪ প্যাকেট সিগারেট এবং ৭ বোতল অ্যামোনিয়াম সালফার ধ্বংস করা হয়। ধ্বংস করা এ মাদকদ্রব্যের আনুমানিক সিজারমূল্য ৩৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৫ টাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আটক/জব্দ করা ১ হাজার ৯৭৯ জন আসামিসহ ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৩০ ইয়াবা ট্যাবলেট; ২৭ কেজি ৪৪৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস; ১ হাজার ৩০৫ ক্যান বিভিন্ন ধরনের বিয়ার; ৯৮ বোতল বিভিন্ন ধরনের মদ; ১৩৭ বোতল ফেনসিডিল; ৫৮৬.৮০০ লিটার বাংলা মদ; ২২ কেজি ৯৯৫ গ্রাম গাঁজা; এবং ৩ কেজি ১৫০ গ্রাম আফিম মামলার মাধ্যমে আলামত হিসেবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তর করা মাদকদ্রব্যের আনুমানিক সিজারমূল্য ৫১০ কোটি ৯০ লাখ ১৩ হাজার ৫৭২ টাকা।

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও সার্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, সীমান্তে মাদক পাচাররোধে বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছে। সবাইকে আশ্বস্ত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২২
এসজেএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।