ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তাদের কাজ!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২২
নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তাদের কাজ!

রাজশাহী: নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।

শনিবার (৪ জুন) বিকেলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল চক্রটির কাজ। এমনকি ফাঁসানোর জন্য নারীর চরিত্রে রাখা হতো তাদের স্ত্রীকেও! রাজশাহী মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এক ভাংড়ি ব্যসায়ীকে ফাঁসানোর পর এ ঘটনা সামনে আসে। ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করেন তারা।

এমনই এক ঘটনার পরে এক ব্যক্তি মহানগর ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবার ডিবি পুলিশ ফাঁদ পেতে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে।

আটকরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার মশিউর রহমানের ছেলে মো. মনির হোসেন (২৭), আতাহার আলীর ছেলে কবির হোসেন খিচ্চু (৩৩), আব্দুল মমিনের ছেলে মুন্না ও মুন্নার স্ত্রী হানিফা খাতুন (৩১) এবং কর্ণহার থানার ডাংগের হাট এলাকার মৃত দুলালের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০)। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ১০ হাজার টাকা ও পাঁচটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে।

ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, সোহাগ (ছদ্মনাম) একজন ভাংড়ি ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ২৬ মে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় অপরিচিত একটি নারী তাকে ফোন করে হানিফা খাতুন বলে পরিচয় দেন। তিনি ফোনে বলেন, তার স্বামী ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি পরিবারসহ রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনী এলাকায় ভাড়া থাকেন। তার ভাড়া বাসায় দুই-তিনটি নষ্ট ফ্যান, একটি পুরাতন সোফাসেট এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র রয়েছে যেগুলো তিনি সোহাগের কাছে বিক্রি করতে চান।

সোহাগকে ওই রাতেই তার বাড়িতে যেতে বলেন। সোহাগ রাতে না গিয়ে দিনে যাওয়ার কথা বললে, হানিফা তার স্বামীর সঙ্গে পরেরদিন সকালেই বগুড়ায় চলে যাবে বলে জানান। এ জন্য তখনই এসে মালামালগুলো দেখে যেতে বলেন সোহাগকে।

এদিকে সোহাগ হানিফার কথায় বিশ্বাস করে তার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছান। পরে হানিফা সোহাগকে বাড়ির নিচ তলার একটি রুমে নিয়ে যান এবং রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সোহাগকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর সেখানে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা প্রতারক চক্রের চারজন সদস্য রুমের মধ্যে ঢোকেন। তারা হানিফার সঙ্গে সোহাগের আপত্তিকর অবস্থার বিভিন্ন ছবি তোলেন।

সোহাগকে তারা চড়-থাপ্পড় মেরে ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ফেসবুকে ছবিগুলো ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখান। আর বাঁচতে চাইলে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। পরে সোহাগের কাছ থেকে নগদ চার হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে রাতের মধ্যে আরও ৪০ হাজার টাকা দিতে বলেন। বাসায় গিয়ে কোনো উপায় না পেয়ে তিনি ঋণ করে আরও নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন ওই চক্রকে।

এ ঘটনায় পরে সোহাগ মহানগর ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।  অভিযোগের ভিত্তিতে এবার ডিবি পুলিশ ফাঁদ পেতে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়।

আটকদের ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান আরেফিন জুয়েল।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২২
এসএস/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।