ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষাখাতে দলীয়করণ ও নৈরাজ্যের অভিযোগ বিরোধী দলের সদস্যদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
শিক্ষাখাতে দলীয়করণ ও নৈরাজ্যের অভিযোগ বিরোধী দলের সদস্যদের

ঢাকা: শিক্ষা খাতে নৈরাজ্য চলছে বলে জাতীয় সংসদে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। শিক্ষাকে দলীয়করণ কারায় ছাত্ররা মাস্তানী করছে আর শিক্ষকরা লাঞ্চিত হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দের ছাঁটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

আলাচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলাম বলেন, করোনার সময়ে সাধারণ শিক্ষা থেকে ড্রপ আউট হয়ে মাদ্রাসায় গেছে। যে মাদ্রাসাগুলোতে এক’শ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিতে হয়। সেখানে গরিব ছেলেপুলেরা ভর্তি হয়েছে। এর কারণ খুঁজে পাইনি। কওমী মাদ্রাসা করতে কারো সন্মতি দিতে হয় না। চাইলেই যে কোনো জায়গায় এটা খোলা যায়। কিন্তু অন্যকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে অনুমোদনের পর অনুমোদন নিতে হয়। একটা মাদ্রাসায় কী হয়? ওয়ান-টুতে যারা পড়ে ভোর সাড়ে ৪টার সময়ে উঠে যায়। তারপর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তারা পড়ে। কী পড়াশুনা করে তা জানিনা। সেখানে সিলেবাস ছাড়া অনেক কিছু পড়তে হয়। বেশি ভয়াবহ হচ্ছে মহিলা মাদ্রাসা। এই মহিলা মাদ্রাসা এত বিস্তৃত। আমার এলাকায় সব জায়গায় সকাল বেলা উঠে দেখি- এদের চেনা যায় না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরখার ভেতরে এনারা থাকে। তারা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাদ্রাসায় থাকে। আমার মনে হয় না সেখানে গার্হস্থ বিজ্ঞান শেখানো হয় কিংবা কিভাবে সংসার করতে হবে সেটা শেখায়। অন্য কিছু শেখায়। আমার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যারা আছেন তাদের এটা দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেটা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে একদম ট্রাশিয়ালি পর্যন্ত। এইখানে অনেক ঝামেলাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা এখন প্রচলিত আছে। আমাদের এখানে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই। কিন্তু একটা ধর্মগ্রন্থকে আপনি বাদ দিয়ে আরেকটা ধর্মগ্রন্থকে আপনি প্রাধিকার দিয়ে সেখানে বিশেষ করে ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, সিক্স, সেভেন, এইট, নাইন পর্যন্ত আপনি সংস্কৃতি বদলের চেষ্টা করবেন, সেটা কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই দেখতে হবে।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি হচ্ছে? ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেছেন ডাক্তার, প্রকৌশলী বানাচ্ছি কিন্তু মানুষ বানাচ্ছি কতগুলো? দায়িত্ব তো উনিও এড়াতে পারেন না। উনিতো ঢাবির ভিসি ছিলেন, কিন্তু যার কোনো প্রকাশনা, গবেষণা, ছিলো না। ডক্টরেট ডিগ্রি নাই, শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হয়েছে। সমস্যাটা ওইখানে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসবে, সেই দলের শিক্ষকদের পদোন্নতি হবে। তাদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর ছাত্রনেতারা মাস্তান হয়ে যায়। নড়াইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লাঞ্চিত, জুতার মালা দিয়ে তাকে ঘুরানো হয়েছে। সাভারে একজন শিক্ষককে হত্যা করেছে। হত্যাকারী কিশোর গ্যাংয়ের কাছে ‘দাদা’ বলে পরিচিত। পরিচালনা কমিটি তার আত্মীয়, আরেকজন শিক্ষক তাকে প্ররোচিত করেছে। যে শিক্ষক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। শিক্ষার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ সময় মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নিজ দলের সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে তো কথা বাড়ানোর দরকার নেই। আধুনিক শিক্ষা বানাবেন। হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়িয়ে ছেড়ে দিবেন। এই দেশে এটাতো হবে না। এগুলো বাদ দিয়ে আসল শিক্ষায় আসেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হাতে সিগারেট দেখা যায় । হাতে চায়ের কাপ আর সিগারেট। ছেলে-মেয়ে হাত ধরাধরি করে হাঁটাহাঁটি করছে, আর সিগারেট খাচ্ছে। এটা কোন সংস্কৃতি? কোন শিক্ষা।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, বিবিএসের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১৮/২০ লাখ নতুন চাকরি প্রত্যাশী জব মার্কেটে প্রবেশ করে। তার মধ্যে দেশে বিদেশে মিলিয়ে ৫/৬ লাখের কর্মসংস্থান হয়। বাকী সবাই থাকে বেকার। এই বেকারের মধ্যে শিক্ষিত বেকার। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় বেকারত্ব তৈরি করে। কর্মবিমুখ যে শিক্ষা ব্যবস্থা সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা কেন রাখবো? কেন আমরা কর্মবিমুখ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে কর্মমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার চিন্তা করছি না।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা র‌্যাংকিংয়ে আমরা কোন জায়গায় আছি? কল্পনা করা যায় ৫ হাজারের মধ্যেও নাই। ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায়। যেভাবেই থাকেন না কেন। আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের জন্য কোনো সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এখানে গবেষণা ও প্রকাশনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের দুর্নীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান নিচে নেমে গেছে। সবক্ষেত্রে অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। জবাবদিহিতা ছাড়া কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।

বিএনপির আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে মানটাই সমস্যা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপের দেখা যায় শিক্ষার মানে ক্রমঅবনমন। র‌্যাংকিংয়ে ধ্বস।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
এসকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।