ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

শ্যামনগরে জোড়া খুনের ঘটনার মূলহোতা লাল্টু সহযোগীসহ আটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
শ্যামনগরে জোড়া খুনের ঘটনার মূলহোতা লাল্টু সহযোগীসহ আটক

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আমির হোসেন ও আব্দুল কাদের নামে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আব্দুল হামিদ লাল্টু (৫২) ও তার সহযোগী বাবলু গাজীকে (৪২) আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

রোববার (১৭ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোর জেলার মনিরামপুর থানাধীন ঝাপা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই সকালে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল বারীর সমর্থক নাদের আলীকে মারধর করে বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টুর লোকজন। এ ঘটনার জেরে শুক্রবার বিকেলে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আব্দুল বারীর কর্মী সমর্থকরা আব্দুল হামিদ লাল্টুর লোকজনকে গালিগালাজ করে। এসময় দু’পক্ষ বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। খবর পেয়ে আব্দুল হামিদ লাল্টুর ছেলে মোখলেছুর রহমান মিলন, মেহেদি হাসান ও ভাই আনিছুর রহমানসহ ৩০-৩৫ জন কর্মী সমর্থক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষে যোগ দেয়। একপর্যায়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে সেখানে অবস্থানরত আব্দুল বারীর কয়েকজন সমর্থককে কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহতদের মধ্যে আব্দুল হানান (৪০), ইব্রাহিম গাজী (৩০), আক্তার হোসেন (৩১), ইসমাইল হোসেন (৩৪), ইমাম আলী (২৭), নাছির উদ্দীন (২৮), সোবহান মোল্যা (৩৮), আব্দুস সাদেক (৪১), আলাউদ্দীন (২৭), মেহেদী হাসান বাবু (২৩), আব্দুল আজিজ (৫০), সিরাজ হোসেন (৪০), হাফিজুর রহমান, (৪০), মুকুল মোল্যা (৩৮) ও ফারুক গাজীসহ (২৭) ১৭ জনকে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।    

এদিকে সংঘর্ষের সময় আহতদের শ্যামনগর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা আব্দুল বারীর ভাতিজা টেংরাখালী গ্রামের আবুল গাজীর ছেলে আমির হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আব্দুস সাকাতের ছেলে আব্দুল কাদের (৩৬) ও আব্দুস সোবহানকে (৫০) সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতে ঢাকায় নেওয়ার পথে আব্দুল কাদেরের মৃত্যু হয়।  

এ ঘটনায় আব্দুল বারী বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানায় ৭৩ জন এজাহার নামীয় আসামিসহ ৪০-৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এহাজারে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বিকেলে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার টেংরাখালী গ্রামে ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে শ্যামনগর থানার রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা মিটিং করেন।

মিটিং চলাকালীন সাতক্ষীরা এলাকায় দাঙ্গা, হামলার মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টিকারী লাল্টু বাহিনীর প্রধান আব্দুল হামিদ লাল্টু এবং তার প্রধান সহযোগী আজগার আলী বুলুর নেতৃত্বে ১১০-১২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল রামদা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, গাছি দা, লাঠি, হকিস্টিক, জিআই পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে থাকা আসবাবপত্র, অফিসের সামনে থাকা মোটরসাইকেল ও কার্যালয়ের ভেতর থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে।

তাদের হামলায় গুরুতর জখম অবস্থায় ১৮-২০ জনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক আহত আমির হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুরুতর আহত কাদের শেখও মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে র‌্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, র‌্যাব-৬ এর একটি অভিযানিক দল গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারে চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুন মামলার আসামিরা যশোর জেলার মনিরামপুর থানা এলাকায় অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি ঝাপা ইউনিয়ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত লাল্টু বাহিনীর প্রধান আব্দুল হামিদ লাল্টু ও বাবলু গাজীকে আটক করে।

আটক আসামিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।