ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পরনের পোশাক খুলে চোখ-মুখ বাঁধা হয় বাসযাত্রীদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
পরনের পোশাক খুলে চোখ-মুখ বাঁধা হয় বাসযাত্রীদের

টাঙ্গাইল: কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনটি রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। তবে রাতে নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও থামিয়ে যাত্রী তোলা বা নামানোর নিয়ম না থাকলেও রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমে চারজনকে এবং পরে দুই বারে তিনজন করে ছয়জনকে বাসে তোলা হয়।

বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা পার হওয়ার পর এ ১০ জন অস্ত্রের মুখে বাসের ২৪ জন যাত্রীকে জিম্মি করে ফেলেন।

এসময় ডাকাতরা পুরুষ যাত্রীদের পরনের পোশাক খুলে ও নারী যাত্রীদের জানালার পর্দা দিয়ে হাত, পা, মুখ ও চোখ বেঁধে মারধর করতে থাকেন। এরপর ডাকাতরা যাত্রীদের সিটের সামনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে তারা কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবার মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটে নেন। বাসটি দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে গাজীপুর থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী ঝটিকা সার্ভিসের চালক (ডাকাত দলের সদস্য) বাসটির মূল চালককে সরিয়ে নিজেই চালকের আসনে বসে বাসটি নিয়েন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর বাসটি গোড়াই এলাকায় মহাসড়কে ইউটার্ন নিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যেতে থাকে। রাস্তায়ই গাড়ির মধ্যে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন  ডাকাত দলের ছয় সদস্য।

ওই বাসের যাত্রীদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের এ বর্ণনা দেন।  

তিনি আরও জানান, ডাকাত দলের এক সদস্যের নানির বাড়ি মধুপুরে। ভোরে ডাকাতরা বাস থেকে নেমে ওই বাড়িতেই আত্মগোপনে ছিলেন। পরে সেখান থেকে তারা পালিয়ে যান। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

নাটোরের বড়াই গ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান ওই বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপারভাইজার রাব্বি ও সহকারী দুলাল তার পরিচিত। কিন্তু বাসের এবারের চালককে এর আগে দেখেননি তিনি। তিনি বড়াইগ্রামের তরমুজ চত্বর থেকে আমড়া, কাঁঠাল ও তালসহ বিভিন্ন ফল ঢাকার গুলশানে নিয়ে যেতে বাসে ওঠেন। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রাবিরতি দেয়। রাত সাড়ে ১১টায় আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহন করা ১০/১২ জন তরুণ যাত্রী ওঠেন। তখন সব যাত্রীই প্রায় ঘুমে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণ দল ঘুমন্ত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে একে একে বেঁধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা, গহনা লুট করে নেন তারা। তারপর এক নারী যাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এসময় ডাকাত দলের কেউ কেউ মৌখিকভাবে বাধা দিলেও তা আমলে নেননি ধর্ষকরা। বাস বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ও নির্যাতন চালিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে ডাকাতরা। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর স্তূপের মধ্যে কাত (উল্টে) যায়। এসময় ডাকাতরা বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা বাসের যাত্রীদের উদ্ধার করেন এবং রক্তিপাড়া জামে মসজিদের ইমামসহ অন্যরা তাদের নাস্তাও করিয়েছেন।

এসপি জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারী যাত্রী জানিয়েছেন, তাকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ করার পর ডাকাতরা তার গলা চেপে ধরেন। তাকে ছাড়া আরও এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে সেই নারীকে তার স্বামী বুধবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা বলে চলে গেছেন।

সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, এ ঘটনায় ডাকাত দলের সদস্য রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশীদের ছেলে। রাজা টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। তিনি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকৃত ঝটিকা বাস সার্ভিসের চালক। বাস চালানোর পাশাপাশি ডাকাতিও করেন তিনি। এ ঘটনায় ঈগল পরিবহনের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত আলী বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
এসআই
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।