ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ওয়েবিল বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার বাস মালিকদের

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
ওয়েবিল বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার বাস মালিকদের

ঢাকা: রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে কমলাপুরের দূরত্ব প্রায় ৬.৩ কিলোমিটার। সে হিসেবে আগের ভাড়া অনুযায়ী এ পথের ভাড়া ১৪ টাকা।

বাহন পরিবহন, বলাকা পরিবহন, মিডওয়েসহ কয়েকটি বাস চলাচল করে এ পথে। কিন্তু এই পথটুকুর জন্য ওয়েবিলের নামে ভাড়া আদায় করা হতো ৩০ টাকা, অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। নতুন ভাড়া অনুয়ায়ীও এ পথের জন্য ভাড়া হওয়ার কথা ১৬ টাকা। তবে বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে তার চেয়েও অনেক বেশি।

এই বাড়তি ভাড়া আদায়ে গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বাসমালিকরা যে ওয়েবিল পদ্ধতি চালু করেছেন, সেটি বন্ধ করতে পারেনি সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। এমনকি দ্বায়িত্বশীল ছিল না বাসমালিক সমিতিও।

শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে বিআরটিএ ভবনে বাস ভাড়া সমন্বয়ের বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওয়েবিল বন্ধে ব্যর্থতা স্বীকার করেছে বিআরটিএ ও বাস মালিক সমিতি উভয়েই।

গত নভেম্বরে বাস ভাড়া ২৬ শতাংশ বাড়ানোর পর বিআরটিএ জোরালভাবে বলেছিল, তারা ওয়েবিল বন্ধ করে দিয়ে কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করবে। যারা কথা শুনবে না, তাদের রুট পারমিট বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয় তখন। কিন্তু নিজেদের এই হুমকি ভুলে গিয়ে কয়েকদিন পরই বিআরটিএর অভিযান থেমে যায়।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মাদ মজুমদার বলেন, গতবার ভাড়া নির্ধারণ করার পর মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য বিআরটিএ, ও পুলিশের যৌথ টিম কাজ করেছে। যা  কয়েক মাস অব্যাহত ছিল। যারা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। সে সময় কতগুলো বাস জব্দ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে বলতে পারব না। '

আপনারা ভাড়া কখনোই কার্যকর করতে পারেন না সাংবাদিকদের এমন বক্তব্যে সড়ক পরিবহন সচিব এ বিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ভাড়া বাড়ার পরপরই কিন্তু মনিটরিং শুরু হয়। গতবার ভাড়া বৃদ্ধির পর বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেটরা ছিলেন। '

ঢাকা শহরে অনেকগুলো বাস চলে জানিয়ে তিনি বলেন,' চোখের আড়ালে যদি করে ফেলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আমাদের নজরে এসেছে, অথচ শাস্তি পায়নি, এমন দৃষ্টান্ত কিন্তু নেই। রোববার (৭ আগস্ট) থেকে শক্তভাবে মনিটরিং করা হবে।   কোনো অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। প্রত্যেক বাসে ভাড়ার তালিকা বড় করে চার্ট দেব, যদি কেউ না টাঙায় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।

বাড়তি ভাড়া রোধে তাদের ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় রাস্তায় থাকে দাবি করে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, 'তারা সপ্তাহের ৬ দিনই রাস্তায় থাকেন এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেছেন। '

ওয়েবিলকে অবৈধ জিনিস আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যদি এ ধরনের অনিয়ম দেখতে পান সংশ্লিষ্টদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়। জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব, তাদের যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন তারা যেন ভাড়া মনিটর করেন। যাতে কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সারা দেশে প্রায় এক লাখ বাস চলে। ঢাকা মহানগরীতে চলে সর্বোচ্চ ৬ হাজার। এই ৬ হাজার গাড়িতে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু অনিয়ম হয়। এ অনিয়ম রোধ করার জন্য আমরা মালিক- শ্রমিকরা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সবাই মিলে দুই মাস যাবত কাজ করছি। আমি নিজেও রাস্তায় ছিলাম, আপনারা অনেকে দেখেছেন। তবে রাজধানীর সব জায়গায় আমরা করতে পেরেছি, তা না।

কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বাস বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি বলেন, মালিক সমিতি থেকে নির্দেশ দিলেই সেটা সবাই পালন করবেন, বাংলাদেশে এমন কোনো সেক্টর এখন পর্যন্ত হয়নি। যারা মানেননি, তাদের গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। সুতরাং আমরা কোনো অন্যায়কে সাপোর্ট করি না। কোন অন্যায় হোক সেটা আমরা চাইও না, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ভাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা (বিআরটিএ) নির্ধারণ করেছে। এখানে সাড়ে ৪২ শতাংশ তেলের দাম বেড়েছে। আর ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ।

ওয়েবিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই পরিবহন নেতা বলেন,'যারা এটা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কাজ চলছে। '

পরিবহন মালিক সমিতি শতভাগ সফল হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন,' ঢাকা ছাড়া সারা বাংলাদেশে আমরা সাকসেস। '

এসি বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না জানিয়ে তিনি বলেন, 'একজনের দুই কোটি টাকা দামের বাস। আরেক জনের এককোটি টাকা দামের বাস।   ফলে যিনি যে পরিমাণ সেবা দিচ্ছেন সেই পরিমাণ টাকা নিচ্ছেন। এসি বাসের ভাড়া ট্রাকের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না।

আর যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া দিয়ে চলেছে। আগামীতেও বন্ধ হবে, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না।

প্রতিটি ওয়েবিলই ২ কিলোমিটার বা এমন দূরত্বে বসানো হয়েছে। আর এই দূরত্বের জন্য সাধারণত ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এই হিসেবে রাজধানীতে বেশিরভাগ বাসেরই ভাড়া কিলোমিটার হিসেবে ৫ টাকা পড়ছে। কোথাও কোথাও তা আরও বেশি পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।