ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ইউটিউব দেখেই মোবাইলের আদ্যোপান্ত শেখেন স্বপন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২২
ইউটিউব দেখেই মোবাইলের আদ্যোপান্ত শেখেন স্বপন

ঢাকা : দুই বছর আগে জামালপুরের বকশিগঞ্জ এলাকা থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন মো. স্বপন (২৬)। প্রথমে মতিঝিলে একটি অফিসে পিয়নের চাকরি নেন।

সেখানকার এক কর্মীর মোবাইল ফোন মেরামত করতে গিয়ে সখ্য গড়েন এক মেকানিকের সঙ্গে। পরে পিয়নের কাজ ছেড়ে শিখতে শুরু করেন মোবাইল সার্ভিসিং।

স্বল্প সময়ে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের আদ্যোপান্ত শিখে নেন স্বপন। এরপর ইউটিউবে এ সম্পর্কিত নানা কারিগরি দেখে অর্জন করেন মোবাইল তৈরির জ্ঞান। তারপর থেকেই অভিনব পদ্ধতিতে নকল মোবাইল ফোন তৈরি শুরু করেন। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের হাতেখড়িও নেন ইউটিউব থেকেই।

প্রতিদিন অন্তত ৫০টি মোবাইল তৈরি করতেন স্বপন। মোবাইলগুলো সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় প্যাকেজিং করতেন। প্যাকেটের গায়ে চায়না, ভিয়েতনাম, ফিনল্যান্ডে তৈরির ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি করতেন। এতে তার ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হতো। নকল মোবাইল বিক্রি করতেন ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আয় হতো হাজার থেকে ১৫০০।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা বিক্রেতারা স্বপনের কাছ থেকে নকল মোবাইল কিনে নিতেন। কিন্তু এ ব্যবসায় বেশিদিন স্থায়ী করতে পারেননি স্বপন। আটক হয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩) কর্তৃক।

সোমবার (৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে নিজের কারখানা থেকে নকল মোবাইল ও আইএমইআই নম্বরসহ তাকে আটক করে র‌্যাব। জব্দ করা হয় ভুয়া আইএমইআই নম্বর। ১৪৯৫ টি মোবাইল, ৩৩৭০টি নকল ব্যাটারি, ১২০টি হেড-ফোন, ৩৮৫টি চার্জার ক্যাবল, ১ হাজার ১৫৫টি মোবাইল চার্জার, একটি সিলার মেশিন, একটি হিট গান মেশিন, ৪৩টি এলসিডি মনিটর, ১০টি ইলেকট্রিক সেন্সর, ১৩টি আইএমইআই কাটার মেশিন। বিপুল পরিমাণ আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোডও জব্দ করেছে র‌্যাব।

সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

কর্নেল আরিফ জানান, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বপনের মোবাইল কিনতেন। এসব মোবাইলে সিম ঢোকালে ‘বিটিআরসির ডাটাবেজে হ্যান্ড সেটটি নিবন্ধিত নয়’ মেসেজ পেতেন গ্রাহকরা। বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও দেখা দিত নকল মোবাইলগুলোয়। অভিযোগ আসলে এসব মোবাইল গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে সার্ভিসিং করে ফিরিয়ে দেওয়া হতো।

তিনি জানান, শো-রুম থেকে কেনার সময় মোবাইলগুলো ঠিক দেখতেন ক্রেতারা। কিন্তু শো-রুম থেকে বের হয়ে আসার পর থেকেই সমস্যা শুরু হতো। অনেক সময় নষ্ট মোবাইল সার্ভিসিংয়ে দিয়ে অনেক গ্রাহক আর সেটি নিতেন না। তখন মোবাইলটি ঠিক করে আরেক কাস্টমারের কাছে বিক্রি করতেন স্বপন।

কর্নেল আরিফ আরও জানান, এ পর্যন্ত স্বপনের চক্রটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দশ হাজারের বেশি মোবাইল বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

আটক স্বপন পঞ্চম শ্রেণি পাস; কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ। গত এক বছর ধরে নিজের কারখানা পরিচালনা করছেন তিনি। কোনো লাইসেন্সও নেই তার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা মোবাইলের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ নিয়ে আসত।

স্বপনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তার অন্যান্য কর্মচারীদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশ সময় : ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২২
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।