ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বড় বাবুর বড় বাড়ি নিয়ে নানান গুঞ্জন!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২২
বড় বাবুর বড় বাড়ি নিয়ে নানান গুঞ্জন!

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী (বড় বাবু) মাহবুব আলম লিকু'র লালমনিরহাট শহরের বড় বাড়ি নিয়ে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী (বড় বাবু) মাহবুব আলম লিকু।

তিনি লালমনিরহাট শহরের টিঅ্যান্ডটি পাড়ায় গত দুই বছর আগে ৫তলা বিশিষ্ট একটি আলিসান বাড়ি নির্মাণ করে জেলাবাসীকে চমক দেখিয়েছেন। কারণ জেলা শহরের যে তিনটি দৃষ্টিনন্দন আলিসান বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। আর তাই জেলাজুড়ে গুঞ্জন উঠেছে বড় বাবুর এই বড় বাড়ি নিয়ে। সবার মুখে অফিস সহকারী পদে চাকরি করে প্রায় দুই কোটির টাকার বেশি মূল্যের বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির টাকার উৎস কোথায়? তবে বাড়ির মালিক মাহবুব আলম লিকু বলেন, কোটি টাকা হাউজিং ঋণে তিনি বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। যার কিস্তি পরিশোধ এখনও শেষ হয়নি।

মাহবুব আলম লিকু এর আগে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারীর দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের ভুয়া বিল ভাউচারে সদর হাসপাতালের ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৬ টাকা আত্মসাৎ করেন মর্মে সিভিল অডিট আপত্তি তোলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ২৯৭৯/৫ স্মারক মূলে তদন্ত কমিটি গঠন করেন তৎকালিন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান আহম্মেদ। তদন্ত কমিটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়ায় আত্মসাৎকৃত টাকা ট্রেজারি চালান মূলে ফেরৎ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কয়েক দফায় সময় নিয়ে জমিসহ আদিতমারীস্থ বসবাসের একমাত্র বাড়িটিও বিক্রি করে সেই টাকা ফেরৎ দিয়ে রক্ষা পান প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম লিকু। এ সময় শাস্তিমূলক বদলিসহ তিনি দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্তও ছিলেন।

এত বড় অংকের সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে শাস্তিমূলক বদলি ও সাময়িক বরখাস্ত থাকার পরেও হঠাৎ এত বড় আলিসান বাড়ি তৈরির বিষয়টি জেলাবাসীকে অবাক করেছে। আত্মসাৎকৃত সরকারি টাকা ফেরৎ দিতে প্রায় সম্বলহীন হয়েছিলেন মাহবুব আলম লিকু। সেই বড় বাবু হঠাৎ করে বড় বাড়ি নির্মাণ করায় সেই টাকার উৎস নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

অবশেষে ক্ষমতার জোরে সব কিছু ম্যানেজ করে বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহারসহ নিজ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন নেন মাহবুব আলম লিকু। সেখানেও বিদ্যুৎ বিলসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠলে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি। অবশেষে সেখান থেকে নিজ এলাকা আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হয়ে আসেন। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদের সঙ্গে বেশ সখ্য গড়ে তোলেন কৌশলী প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম লিকু। সম্মিলিতভাবে এ হাসপাতালেও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন বলে স্থানীয় ও কর্মচারীদের দাবি।

টাকা ছাড়া কোনো ফাইলে কাজ হয় না। বড় কর্তাকে ম্যানেজ করায় নিজের ইচ্ছে মতোই করেন সব কার্যক্রম। তার অনিয়ম বা হয়রানির প্রতিবাদ করলে বড় কর্তাকে দিয়ে সেই কর্মচারীকে শোকজ বা উল্টো হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। মূলত স্থানীয় কর্মচারী হওয়ায় এলাকার প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম করেন বলেও দাবি ভুক্তভোগীদের।

গত অর্থ বছরের শেষ দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে মাহবুব আলম লিকুর। এ কারণে আর্থিক দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদ দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। নিজেকে বাঁচাতে তখন স্থানীয় কর্মচারীদের নিয়ে পৃথক গ্রুপ তৈরি করেন মাহবুব আলম। প্রকাশ্যে দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেলে হাসপাতালের সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদ, অপরটিতে নেতৃত্ব দেন প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাহবুব আলম লিকুর একজন সহকর্মী বাংলানিউজকে বলেন, টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না প্রধান অফিস সহকারী। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয় না। টাকার বিনিময়ে সব কিছু ম্যানেজ করেন তিনি। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় হাসপাতালের দুই গ্রুপের টানাটানিতে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। সম্প্রতি তাদের মাঝে সমোঝোতা হয়েছে। তাই আবারও শুরু হয়েছে তাদের অনিয়ম। মূলত দুই গ্রুপ দুর্নীতির বরপুত্র। তাদের অপসারণ করা না হলে পরিবেশ শান্ত হবে না।

লালমনিরহাট শহরের একজন বাসিন্দা বলেন, বাড়িটি নির্মাণের কিছুদিন আগেও চা খাওয়ার টাকা ছিল না মাহবুবের। অথচ হঠাৎ বিশাল বাড়ি নির্মাণের টাকা কোথায় পেলেন। আমরা অবাক। কেরানী পদে চাকরি করে সন্তানদের বড় প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার খরচ দিয়েও এত বড় বাড়ি নির্মাণ দুর্নীতি ছাড়া অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তার একজন প্রতিবেশী দাবি করেন, আলিসান এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বিচারকরা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন তদবিরও করছেন তিনি। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষ আসেন এ বাড়িতে। এজন্য তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেন না। মাহবুব আলম লিকু ভাড়ার সঙ্গে তদবির বাণিজ্যও করেন বলে দাবি তার।

বাড়িটির মালিক আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম লিকু বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি সব পাওনা পরিশোধ করেছি। বাড়িটি কোটি টাকা হাউজিং ঋণে নির্মাণ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকেও ঋণ করেছি। বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।