ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরাতে ভরসা ‘কূটনৈতিক তৎপরতা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরাতে ভরসা ‘কূটনৈতিক তৎপরতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি এখনো বিদেশে পলাতক। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থান নিশ্চিত হলেও বাকি তিন জনের বিষয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

২০০৯ সালে পলাতক এই ৫ আসামির বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ফেরত আনা যায়নি, এমনকি নিশ্চত হওয়া যায়নি তিন জনের অবস্থান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারপোলের এ রেড নোটিশ অনেকটা আন্তর্জাতিক পরোয়ানার মতো হলেও এর মাধ্যমে আসামিকে ফিরিয়ে দেওয়া বা গ্রেফতারের বাধ্যবাধকতা থাকেনা। তবে রেড নোটিশ জারি থাকলে নির্ধারিত দেশ আসামি ফেরত দেওয়ার আবেদনকে গুরুত্ব দেয়। বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকলে আসামি ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক তৎপরতার ওপরই নির্ভর করে।

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সূত্রে জানা যায়, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হলে ওই আসামির বিষয়ে প্রতিটা দেশ অবগত হয়ে যায়। কারণ রেড নোটিশ জারির পর দেশগুলোর পুলিশের ডাটাবেজ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে তার বিষয়ে তথ্য দেওয়া থাকে।

বাংলাদেশের শুধুমাত্র ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে উল্লেখ করে এনসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব দেশের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি নেই সেসব দেশ থেকে আসামি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে সেই দেশের সরকারের ইচ্ছার ওপর। তারা চাইলে মানবাধিকারের বিষয় বিবেচনায় আসামি রেখেও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইন্টারপোলের কাজ আসামি ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলাকালীন মামলার কাগজপত্র বা তথ্য প্রমাণ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেওয়া।

এনসিবির তথ্যে কে কোথায়?

যে পাঁচ খুনি বিদেশে পলাতক আছেন তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া, শরিফুল হক ডালিম লিবিয়া বা পাকিস্তান, আব্দুর রশিদ লিবিয়া বা জিম্বাবুয়ে এবং রিসালদার মোসলেউদ্দিন পাকিস্তান বা ভারতে থাকতে পারেন।

তিন জনের অবস্থান নিশ্চিত হতে সাম্ভাব্য বেশ কয়েকটি দেশেই যোগাযোগ করেছে এনসিবি। এরমধ্যে বেশিরভাগ দেশই তাদের নিজস্ব ডাটাবেজ এবং ইমিগ্রেশনে আসামিদের বিষয়ে তথ্য পায়নি। তবে কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

২০২০ সালে মোসলেউদ্দিন ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে বলে সে দেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ সংবাদের ভিত্তিতে এনসিবি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন কোন তথ্য পায়নি। এক্ষেত্রে ভারতে গ্রেফতার হলে বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরানো যেতো সহজেই।

নূর-রাশেদকে ফেরাতে সরকারের চেষ্টা চলছে

যেহেতু নূর এবং রাশেদের অবস্থান নিশ্চিত জানা গেছে, সেক্ষেত্রে তাদের ফিরিয়ে আনতে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত না পাঠাতে কানাডা সরকারের নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাশেদের অবস্থানের বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে আটকে আছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যারা বাইরে আছেন তাদের মধ্যে দুই-একজনকে শিগগিরই দেশে আনা হবে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যদের যারা খুন করেছে, এ মামলার যে আসামিরা দেশের বাইরে আছেন, তাদের দেশে না আনা পর্যন্ত আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলব না। আনার প্রক্রিয়া সম্বন্ধেও বিস্তারিত বলব না। যে দু’জনের অবস্থান চিহ্নিত করা গেছে, তাদের আনার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

আসামিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি সহযোগিতা না পেতাম, তাহলে কিন্তু এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তার মানে বোঝায় আমরা কিছুটা সহযোগিতা পাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য যারা দেশ চালিয়েছিল, তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমাদের বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সব সমস্যা একটা একটা করে শেষ করা হচ্ছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশে না থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দায়ের করা হয় মামলা। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিন জনকে খালাস দেন।

২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

এরপর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আরেক খুনি আজিজ পাশা।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিস) ইউনিট গ্রেফতার করে আরেক পলাতক আসামি খুনি আবদুল মাজেদকে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১২ এপ্রিল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি পাঁচজন বিভিন্ন দেশে পলাতক। বঙ্গবন্ধুকে খুনের পর বিভিন্ন সরকার এ আসামিদের বিদেশের মিশনে উচ্চ পদে নিয়োগ দেয়। এ সুযোগে তারা বিভিন্ন নামে পাসপোর্ট করে পালিয়ে থাকার পথ সুগম করেছে বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
পিএম/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।