ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চক্রের টার্গেট ছিল জিক্সার বাইক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
চক্রের টার্গেট ছিল জিক্সার বাইক

ঢাকা: পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের বাইক/মোটরসাইকেল চুরি করতেন নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। বাইক চুরির জন্য চক্রটি বিশেষ ভাবে মাস্টার কি (নকল চাবি) তৈরি করে।

সুযোগ বুঝে নকল চাবির মাধ্যমে টার্গেট করা বাইকটি স্টার্ট করা মাত্রই ফুর হয়ে যেত চোর চক্রের সদস্যরা।

এমনভাবে পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। এরপর কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় সেগুলো কম দামে বিক্রি করতেন তারা।

সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোটরসাইলেক চোর চক্রের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়৷ গ্রেফতার আসামিরা হলেন- চক্রের মূলহোতা নূর মোহাম্মদ (২৬),  অন্যতম সহযোগী রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৩ টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা  বলেন, প্রথমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য নুর মোহাম্মদ ও রবিনকে শনিরআখড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্য তিন সদস্য সজল, মনির ও আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৩টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে সুজুকি জিক্সার মডেলের সখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চুরির জন্য তাদের টার্গেটেড এরিয়া ছিলো পুরান ঢাকা। ওই এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করতেন তারা। গত কয়েক বছরে এই চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।

তিনি জানান, চক্রের সদস্যরা খুবই ধূর্ত। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোরদের চেহারার সঙ্গে মিল পাওয়ায় যায়। এরপর অভিযান চালিয়ে প্রথমে চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর নুর মোহাম্মদের তথ্য অনুযায়ী যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকা থেকে সজল, মনির এবং আকাশকে গ্রেফতার করা হয়।

কে এই নূর মোহাম্মদ: জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতেন। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চা দোকানে গ্রেফতারকৃত রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুইজন মিলে পরিকল্পনা করেন, কীভাবে দ্রুত টাকা-পয়সার মালিক হওয়া যায়। নূর মোহাম্মদ রবিনকে বলেন, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটর সাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটর সাইকেল পরীক্ষামূলক ভাবে চুরি করে। এরপর থেকে তারা দুই বন্ধু এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।

চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করেন। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ পথ হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহারকে রুট হিসেবে ব্যবহার করতেন। অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরাণীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রাস্তাকে রুট হিসেবে ব্যবহার করতেন। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এসব চোরাই বাইককে ভরতের বর্ডার ক্রস করা বলে বিক্রি করতেন।

গ্রেফতার সজলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনী বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে ফুঁসলিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু মা-বাবা তাদের মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়ালে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নূর মোহাম্মদ ও রবিনের সঙ্গে যোগ দেয়। গ্রেফতার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশপাশের এলাকায় চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটর সাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যান্যরা ভাগ করে নিতেন।

গ্রেফতার আসামিরা আরও জানান, তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন। এ পর্যন্ত ৫০০ টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন থানায় গ্রেফতার নূর মোহাম্মদের নামে ৪টি মামলা, রবিনের নামে ৩টি মামলা এবং অন্যান্য তিন জনের বিরুদ্ধে  ১টি করে মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।