ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

১৫ বছরের অভিজ্ঞ রানীর সহায়তায় লঞ্চে সন্তান প্রসব প্রসূতির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
১৫ বছরের অভিজ্ঞ রানীর সহায়তায় লঞ্চে সন্তান প্রসব প্রসূতির

বরিশাল : চিকিৎসকের দেওয়া সময় অনুসারে আরও দিন আঠারো পরে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. হারিসের স্ত্রী ঝুমুর বেগমের। নিজ জন্মভূমিতে সন্তানেরও জন্ম হবে সে আশায় ঢাকা থেকে বরিশাল পানে ছুটছিলেন হারিস।

সঙ্গে স্ত্রী, মা ও অন্যান্য স্বজন। যাত্রা করেছিলেন এমভি আওলাদ-১০ লঞ্চে।

মাঝ নদীতে হঠাৎ প্রসব ব্যথা ওঠে ঝুমুরের। লঞ্চে মেডিকেল কিট থাকলেও কারও সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা তো নেই। তা ছাড়া লঞ্চ থামিয়ে যে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, তাও সম্ভব না। তাই কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না হারিস। যে লঞ্চে যাচ্ছিলেন, তাতে কোনো চিকিৎসক-নার্স বা ধাত্রী আছেন, তাও জানেন না। এ অবস্থায় লঞ্চ স্টাফদের বুঝিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন হারিস।

লঞ্চের স্টাফরা এসে ঝুমুরকে একটি কেবিনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ডেকের একটা অংশ খালি করে সেখানে তার প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়। একদিকে ঝুমুরকে মায়ের কাছে রেখে স্বজন ও স্টাফদের নিয়ে লঞ্চের আনাচে-কানাচে খুঁজতে থাকেন কোনো চিকিৎসক বা নার্স কিংবা কোনো ধাত্রী আছেন কিনা। পেয়েও যান রানী বেগম (৬০) একজনকে।

ধাত্রী রানী বেগম১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রানী বেগমের মাধ্যমেই মাঝ নদীতে লঞ্চের ডেকে ছেলে সন্তান প্রসব করেন ঝুমুর। এ অবস্থায় সবার মনেই চিন্তার ধারা ছিল। কিন্তু সদ্য ভূমিষ্ঠের কান্নার শব্দ পেয়েই সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন।

জানা গেছে, বরিশাল নগরের সাগরদী এলাকার বাসিন্দা রানী বেগম কিছুদিন আগে ঢাকায় মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। মাঝ রাতে ঝুমুরের প্রসব ব্যথার কথা জানার পরপরই ছুটে আসেন তার কাছে। পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন দ্রুতই সন্তান প্রসব করবেন ঝুমুর। পরে আরেক যাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সন্তান প্রসবের কাজে লেগে যান। এ সময় লঞ্চের স্টাফরা তাকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে সহায়তা করেন।

রানী বলেন, তিনি সন্তান প্রসবের কাজে ১৫ বছরের অভিজ্ঞ। বহু নারীর সন্তান প্রসবে সহায়তা করেছেন তিনি। কিন্তু মাঝ নদীতে গভীর রাতে কোনো নারীর সন্তান প্রসবে সহায়তার ঘটনা তার জীবনে প্রথম। সাহস নিয়ে তিনি ধাত্রীর কাজটি করেছেন। মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন চিন্তা করে তার আনন্দ হচ্ছে।

ঝুমুরের ভাই বেল্লাল জানান, রানী না থাকলে তার বোনের অবস্থা কী হতো, সেটা চিন্তা করতে পারছেন না। ভাগনের জন্মক্ষণে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় রানী পাশে ছিলেন বলেই সবকিছু ঠিক ভাবে হয়েছে। মা ও শিশু সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে। এ জন্য তিনি রানী ও লঞ্চ স্টাফদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানান, রানীর পাশাপাশি এমভি আওলাদ-১০ লঞ্চের স্টাফ ও অন্যান্য যাত্রীরাও অনেক সহায়তা করেছেন। তাদের বিষয়টি জানানোর পর যে যার নিজ নিজ জায়গা ছেড়ে দিয়ে প্রসবের স্থান করে দেন। নারী-পুরুষ সবাই মিলে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন।

মো. হারিস তার নবাগত সন্তান নিয়ে ব্যাপক খুশি। স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ থাকায় সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানিয়েছেন তিনি। রানী বেগমকেও জানিয়েছে অসংখ্য ধন্যবাদ। লঞ্চ স্টাফদের কাছেও চির কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানান। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নিজ বাসায় পৌঁছে এসব কথা জানান তিনি। হারিসের বড় ছেলে সাইমনও তার ফুটফুটে ছোট ভাইকে পেয়ে ব্যাপক খুশি।

বাংলাদেশ সময় : ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।