ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএমকে সাময়িক বরখাস্ত 

ডিস্ট্রিক্ট ও উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএমকে সাময়িক বরখাস্ত 

পাবনা (ঈশ্বরদী): পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ দাশুড়িয়া শাখা কার্যালয়ে ‘ঘুষের টাকা নেওয়া এবং এ দৃশ্য ভিডিও করতে দেখে টাকা ফেরত দেওয়ার’ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ময়মনসিংহ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গঠন করা তদন্ত কমিটি সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে।

তদন্ত শেষে কমিটি প্রতিবেদন দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আকমল হোসেন বাংলানিউজকে এতথ্য জানান।  

তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত হয়েছে।  

পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আকমল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে দাশুড়িয়া কার্যালয় থেকে ময়মনসিংহ জেলার তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার একটি বান্ডল হাতে নিয়েছেন ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান। এসময় সামনে বসা ব্যক্তি সেটা ভিডিও করে টাকার বিষয়ে গ্রাহককে জিজ্ঞাসা করেন।  

এসময় গ্রাহককে বলতে শোনা যাচ্ছে, স্যারের কাছ থেকে একটি নতুন সংযোগ নিচ্ছি তো, এ জন্য স্যার মিষ্টি খাওয়ার টাকা চেয়েছেন।  এসময় সঙ্গে সঙ্গেই সেই টাকা ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান ওই গ্রাহকের দিকে ছুড়ে মারেন।

ভাইরাল হওয়া ‘ঘুষ’ প্রদানকারী ওই ব্যক্তি হলেন- দাশুড়িয়া পুরাতন ট্রাফিক মোড় এলাকার আনিছুর রহমান ওরফে হামেজ উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম রানা।  


তার দাবি, পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর অন্তর্ভুক্ত দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের আওতায় একটি বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আমি বেশ কিছুদিন আগে আবেদন করি। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম সংযোজনের পরও নানা অজুহাতে সংযোগ দিচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানকে “মিষ্টি খাওয়ার জন্য” এক লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দিলে সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। পরে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার ডিজিএম সাহেবকে দিতে যাই। তিনি টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রাখার সময় সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি টাকা দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে ফেললে হাতে নেওয়া টাকা ছুড়ে ফেলে দেন ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তিকে আমি চিনি না।

তবে ঘটনাটি সাজানো বলে দাবি করে পাবনার ঈশ্বরদী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, আমিনুল ইসলাম রানা নামে এক খেলাপি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের বকেয়া ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়টি ভিডিও করে ‘ঘুষ’ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন।  গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আমিনুল ইসলাম রানা তিন/চারজন সহযোগী নিয়ে অফিসে আসেন। সেখানে ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডল নিয়ে পবিস এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমানকে উৎকোচ দেওয়ার অভিনয় করে ভিডিও করার চেষ্টা করেন। ঘটনা বুঝতে পেরে আমিনুল ইসলামকে ধরার চেষ্টা করলে আমিনুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।
ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমিনুল ইসলাম রানার বাবার নামে ৯ লাখ ৩ হাজার ৯৪৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে আদালতে মামলা রয়েছে।  এজন্য তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আমিনুল ইসলাম আদালতে রিট করলে আদালত তাকে ছয় মাসের মধ্যে বিল পরিশোধ করার নির্দেশনা দেন। ছয় মাসের মাসিক কিস্তিতে বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বিল পরিশোধ না করে উল্টো আমাকে দেখে নেওয়ার নানা রকম হুমকি ধামকি দেন। পরে নতুন সংযোগ নিতে এলে আমরা তাকে বলি, আগের বিল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তখন তিনি টাকা বের করে আমাকে দেন৷ আমি টাকা নিয়ে তাকে বলি টাকাটা ক্যাশ কাউন্টারে জমা দেন। এসময় তাদের কয়েকজন মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সেটিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে প্রচার করেন। পরে ওইদিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।


তবে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানের দাবিকে মিথ্যা বলে দাবি করে ‘ঘুষ’ প্রদানকারী আমিনুল ইসলাম রানা বলেন, ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান এখন নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিওর জন্য সমালোচনার মুখে পড়ে ডিজিএম ‘আবোল-তাবোল’ বকছেন।


ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে রোববার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সভায় পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আকমল হোসেন সভায় জানান, ডিজিএম সাহেব ভালো মানুষ। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি ট্র্যাপ না আসল, তা জানার জন্য। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

** পাবনায় পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে ‘ঘুষ’ দেওয়ার ভিডিও নিয়ে তোলপাড়

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।