জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): চারদিকে ঢাকের শব্দ, চণ্ডী পাঠে মুখর ভক্তরা। মহামায়া, জগজ্জননী দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে এসেছেন।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে জমে উঠেছে পূজার বাজারগুলো। মণ্ডপে দেবীমাতা ও তার সন্তানদের সাজসজ্জার পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে বেড়েছে পূজা আয়োজকদের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। সেই সাথে নিজের ও পরিজনদের পছন্দের পোশাক ও অলংকার কিনতে শেষ মুহূর্তে ছুটছেন কেউ কেউ। কিনছেন পূজা সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র। আর পূজার এইসব কেনাকাটার সবচেয়ে বড় বাজার পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারিবাজারে নেমেছে মানুষের ঢল। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলছে বিকিকিনি, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। শাঁখারীবাজারের অলিগলিতে যেন পা ফেলার জায়গা নেই।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শাঁখারীবাজারে সরোজমিনে দেখা যায়, প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে মুকুট, শাড়ি, অলংকার, লেস, সিঁদুর, ফুলের মালা, প্রতীকী অস্ত্র ও ঘট কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। পূজা-অর্চনার জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন হয় তার অধিকাংশই মেলে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে। এসব উপকরণ কিনতে ক্রেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন এখানে। পূজার জন্য প্রায় ১০০ উপকরণের প্রয়োজন হয়। শাঁখারীবাজার থেকেই এসব উপকরণ সংগ্রহ করা যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাঁখারীবাজার থেকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করেন।
পূজা উপলক্ষে ঢাকার আশপাশের বিক্রেতারাও বিভিন্ন জিনিস পাইকারি দরে কিনে নিচ্ছেন এখান থেকে। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পুরো পরিবারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে কেনাকাটা করছেন এখানে। প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে পূজার সব উপকরণই মেলে শাঁখারীবাজারে।
পূজার কেনাকাটা করতে আসা কাজল রাণী সরকারের সাথে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, পূজার বাকি আর কয়েকদিন তাই এখন থেকেই অল্প করে কেনাকাটা করতে এসেছি। আজ চন্দন কিনেছি, লেস কিনব আবার মালাও কিনব। তিলকচন্দন আর মালা মুকুট আছে, এসবই কেনা হবে। ছেলেমেয়েদের জন্যও কিছু কেনাকাটা করেছি। দামের দিক থেকে মোটামুটি কম দামেই জিনিসপত্র পেয়েছি এখানে।
নরসিংদী থেকে শাখাঁরীবাজারে এসেছেন অমিতোষ পাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পূজার মুকুট, পূজার শাড়ি, পূজার গয়না, পূজার চুড়া, শাড়ি এইগুলা কিনতেছি। আমরা মালাসহ পূজার যা যা লাগে সবই মোটামুটি কিনতেছি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেই আমি প্রতিবছরই এখানে পূজার সামগ্রী কেনাকাটা করতে আসি।
শাঁখারী বাজারের ব্যবসায়ী সাজঘরের ম্যানেজার সুদীপ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পূজার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে মানুষও পূজার ব্যয় কমিয়ে আনতে চেষ্টা করেছে। এবার অনেক মৃৎশিল্পীই শুধু মাটি আর রং ব্যবহার করে মা দুর্গাকে পূজার জন্য প্রস্তুত করেছে। এ কারণেই মা দুর্গাকে সাজানোর জন্য কাপড়সহ কিছু জিনিসের চাহিদা একটু কম।
বাদ্যযন্ত্রের কারিগর নিতাই কুমার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাক-ঢোল নতুন বিক্রয় হওয়ার চেয়ে পুরাতনগুলো ঠিক করতে বেশি আসেন বাদকেরা। পূজা সামনে থাকায় কাজের চাপ অন্য মাসের চেয়ে বেড়েছে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে। ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে, যা গত বছরের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ২৪২টি, যা গত বছরের চেয়ে ৭টি বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
নিউজ ডেস্ক