ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও বেপরোয়া ভূমি সার্ভেয়ার

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২২
দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও বেপরোয়া ভূমি সার্ভেয়ার

ময়মনসিংহ: দেশের অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহে চলছে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। প্রয়োজন অনুসারে চলছে ভূমি অধিগ্রহণ।

এতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন ভূমি সরদার মো: জাহাঙ্গীর নামে এক সার্ভেয়ার। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যা তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে।

সম্প্রতি করা তদন্তে ভূমি সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মেলে। যা প্রতিবেদন আকারে দাখিল করা হয়। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো এক অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। যা নিয়ে ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।  

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় চেক ছাড়ে সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক গত ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. এরশাদুল আহমেদকে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।  

দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৬ জুন সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দাখিল করেন। এ ঘটনার প্রায় দুই মাস পর গত ২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করে অভিযুক্তের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি চিঠি পাঠান।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্ভেয়ার সরদার মো. জাহাঙ্গীর দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে খ্যাত। তার দ্বারা ভূমি অধিগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের আরও ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় তার দুর্নীতি পরায়ণতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় মোকদ্দমা রুজুর প্রস্তাব করা হলো। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখার অপর সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মোকদ্দমা রুজুর প্রস্তাবও করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ২৫ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজুর রহমান।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এস.এ.এম রফিকুন্নবী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। তারাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

আরও জানা গেছে, তদন্ত চলমান অবস্থায় গত ১৬ আগস্ট ভালুকা উপজেলার কাচিনা গ্রামের সবদুল (৫৫) নামে এক ভূমি মালিকের কাছ থেকে ময়মনসিংহ অগ্রণী ব্যাংক ছোট বাজার শাখার দুটি চেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ ওঠে সার্ভেয়ার সরদার মো. জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট ময়মনসিংহের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর অঞ্চল আদালতে চেক উদ্ধারের মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী সবদুল।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণের নিমিত্তে ভালুকার কাচিনা মৌজায় আমার মালিকানাধীন এক খণ্ড ভূমি অধিগ্রহণ হওয়ায় গত ১৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৬ টাকার দুটি চেক দেওয়া হয়। ওই চেক নিয়ে আসার পথে ময়মনসিংহ নগরীর কাচারি মসজিদ এলাকায় ভালুকার কাচিনা এলাকার দুলাল হোসেন, সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাকে। পরে জোরপূর্বক আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের দুটি চেকে স্বাক্ষর নেন।    

ওই মামলায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালত চেক দুটি উদ্ধারে তল্লাশি পরোয়ানা (সার্চ ওয়ারেন্ট) জারি করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন আদালতের কর্মকর্তা চন্দন কুমার।

এসব ব্যাপারে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সার্ভেয়ার সরদার মো. জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা , অক্টোবর ৬, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।