ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চতুষ্পদ প্রাণির মতো চলছেন টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত মজনু 

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২২
চতুষ্পদ প্রাণির মতো চলছেন টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত মজনু  টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত মজনু 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: মজনু মিয়া (৪০)। জন্মের পর স্বাভাবিক থাকলেও ৫ বছর বয়স থেকে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

‘টার্নার সিনড্রোম’ নামে বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হাত ও পা বেঁকে গিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা থমকে যায় তার। পাশাপাশি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন মজনু। হাঁটেন চতুষ্পদ প্রাণির মতো হাত ও পায়ের উপর ভর দিয়ে। গায়ে পোশাকও পড়েন না। নগ্ন শরীরে গ্রামের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ান তিনি।  

টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত মজনু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আইরল গ্রামের মো. রবি উল্লাহর ছেলে। ১৯৮২ সালে জন্ম নেওয়া মজনুর জীবন ছিল সবার মতই স্বাভাবিক। ৫ বছর বয়সে অন্য ১০টি শিশুর মতোই স্বাভাবিকভাবে খেলাধূলা ও হাঁটাহাঁটি করতেন তিনি। তবে এ বয়সেই তিনি হঠাৎ এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন।

চার ভাই এবং তিন বোনের মধ্যে মজনু মিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। ভাইদের মধ্যে মজনু সবার বড়। তার বাবা একজন কৃষক।  

পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় মজনুকে খুঁজে বের করে বাড়িতে আনতে হয়। এই কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য কিছুদিন তাকে উঠানে গর্ত করে তাতে আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কান্নাকাটির কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মজনুর মা হনুফা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে জন্মের পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালোই ছিল। স্বাভাবিক চলা ফেরা করত। পাঁচ বছর বয়সের পর থেকেই হঠাৎ তার শরীরের এক বিরল দেখা দেয়। এরপর থেকে সে তার পায়ে হাঁটতে পারে না। মাটিতে দুই হাত সামনে ও পিছনে দুই পা ভর চলতে থাকে। ডাক্তারের কাছে অনেকবার নিয়েছি কিন্তু চিকিৎসায় কোনো সুফল মেলে নি। ডাক্তার বলেছে তাকে উন্নত মানের চিকিৎসা করাতে। আমার স্বামী একজন কৃষক। আমাদের পক্ষে এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা করা সম্ভব না। তাই সরকার যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে তাহলে তার কষ্টটা লাগব হইত।

মজনুর বৃদ্ধ বাবা রবি উল্লাহ বাংলানিউজককে বলেন, কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। অভাবে সংসার ৮ জন সদস্য নিয়ে চলাফেরা কষ্ট হয়ে যায়। আমার পক্ষে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারের পাশশাপাশি সমাজের বিত্তবান এগিয়ে আসলে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত হতো।

স্থানীয় লোকজন বাংলানিউজকে বলেন, মজনু ছোটবেলা থেকেই এ রোগে কষ্ট করে আসছে। সম্পর্ণ নগ্ন অবস্থায় দুই পা ও দুই হাত দিয়ে প্রাণীর মতো চলাফেরা করছে। সারাদিনই বাড়ির বাইরে থাকে। অনেক সময় রাত হয়ে গেলে তার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে বাড়িতে আনে। তাকে দেখলে আমাদের কষ্ট লাগে। সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে সেও তো স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ডা. সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এটি টার্নার সিনড্রোম নামে বিরল একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের হাত ও পা বেঁকে যায়। ১৯১৭ সালে তুরস্কে প্রথম বিরল এই রোগটির দেখা মেলে। মূলত এটি একটি জেনেটিক সমস্যা। আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। আধুনিক উপায়ে সুচিকিৎসার মাধ্যমে মজনু স্বাভাবিকভাবে পায়ে হাঁটতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২২
এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।